প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃত সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি ও নাট্যকার হলেন কালিদাস (Kalidasa)। বিশ্বসাহিত্যে যে সমস্ত কবিদের নাম প্রথম সারিতে উচ্চারিত হয়, তাদের মধ্যে কালিদাস অগ্রগণ্য। ইংরেজি সাহিত্যে যেমন শেক্সপীয়ার, বাংলা সাহিত্যে যেমন রবীন্দ্রনাথ, তেমনই সংস্কৃত সাহিত্যে অগ্রগণ্য হলেন কালিদাস। ব্যাসদেব ও বাল্মীকি মুনির পরেই কালিদাসের নাম ভারতীয় কবি হিসেবে শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হয়। কালিদাস রচিত ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক সাহিত্য হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়া ‘কুমারসম্ভব’, ‘মেঘদূত’, ‘রঘুবংশ’ ইত্যাদি কাব্যের জন্যও তিনি ভারতীয় সাহিত্যের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর নাট্যরচনার প্রতিভা তাঁকে কিংবদন্তীতে পরিণত করেছে। তাঁর রচনার দ্বারা সর্বকালের কবিরা অণুপ্রাণিত হয়েছেন। সেই কারণে তাঁকে ‘কবিকুলগুরু’ বলা হয়ে থাকে।
কালিদাসের জন্ম বা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কোন নির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়ায় তাঁর জন্মসাল ও বংশপরিচয় সম্বন্ধে সঠিক কিছুই বলা যায় না। তাঁর রচনাগুলিতে হিমালয়ের সৌন্দর্যের বিশদ বর্ণনা থেকে অনুমান করা যায় হিমালয়ের সংলগ্ন কোনও স্থানে কালিদাসের জন্ম হয়েছিল। তাঁর ‘কুমারসম্ভব’ কাব্যে উজ্জয়িনী রাজ্য ও তার পাশ দিয়ে বয়ে চলা শিপ্রা নদীর বর্ণনা রয়েছে যার থেকে মনে করা হয় কালিদাসের জন্ম হতে পারে উজ্জিয়িনীতে। লক্ষ্মীধর কাল্লা নামে একজন সংস্কৃত কাশ্মীরি পণ্ডিত কালিদাসকে নিয়ে একটি বই রচনা করেন যেখানে তিনি কালিদাসের জন্মস্থান হিসেবে কাশ্মীরের উল্লেখ করেছেন। এর সপক্ষে লক্ষ্মীধর বলেন যে, কালিদাস তাঁর রচনায় জাফরান গাছের উল্লেখ করছেন যা একমাত্র কাশ্মীরেই দেখতে পাওয়া যায়। আবার হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে কালিদাসের জন্ম হয়েছে প্রাচীন মালব দেশে। ঐতিহাসিক ও পণ্ডিতদের মতে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতক থেকে যষ্ঠ শতকের মধ্যে কালিদাসের জন্ম হয়েছে। কালিদাসের রচনা ‘কুমারসম্ভব’ দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের পুত্র কুমার গুপ্তকে নিয়ে লেখা বলে অনুমান করা হয়। সপ্তম শতকের কবি বাণভট্টের রচনায় কালিদাসের কথা উল্লেখ রয়েছে। এর থেকে অনুমান করা হয়, কালিদাস বাণভট্টের পূর্ববর্তী কবি। ষষ্ঠ শতকের জৈন কীর্তি দ্বিতীয় পুলকেশীর আইহোল শিলালিপিতে কালিদাসের উল্লেখ রয়েছে। এর থেকেও এই তথ্যই প্রতিষ্ঠিত হয় যে কালিদাসের জন্ম হয়েছে ষষ্ঠ শতকের পূর্বে।
কালিদাসকে নিয়ে বহু লোককথা প্রচলিত আছে। কথিত আছে কালিদাস প্রথম জীবনে মূর্খ ছিলেন। একজন বিদূষী ও পণ্ডিত রাজকুমারী তাঁর রাজ্যের সমস্ত পুরুষদের বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা নেন। এই পরীক্ষায় তাঁর রাজ্যের সমস্ত পুরুষ অকৃতকার্য হন। অপমানিত পুরুষেরা রাজকুমারীর উপরে তাদের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে ছলনাপূর্বক মূর্খ কালিদাসের সঙ্গে রাজকুমারীর বিবাহ দেন। বিবাহের পরে রাজকুমারী কালিদাসের মূর্খতার কথা জেনে তাঁকে ভৎসর্না ও অপমান করে তাড়িয়ে দেন। অপমানিত ও লাঞ্ছিত কালিদাস রাজ্য ত্যাগ করে এক প্রাচীন মন্দিরে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং সেখানেই তিনি প্রাচীন পুঁথি অধ্যয়ন করে পণ্ডিত হয়ে ওঠেন। তবে এই কাহিনীর সত্যতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।
কালিদাসের রচনাগুলি মূলত বেদ, পুরাণ ও মহাভারতের কাহিনীর উপর নির্ভর করে রচিত। তাঁর লেখনীর মাধ্যমে ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতি, জনপদ ও রাজাদের শাসনপদ্ধতির একটি রূপ আমরা দেখতে পাই। কালিদাসের রচনায় পুরাণ, দর্শন, অর্থশাস্ত্র, কামশাস্ত্র, সঙ্গীত, চিত্রকলার অবাধ বিচরণ রয়েছে। কালিদাসকে সমস্ত কবিরা ‘উপমার কবি’ বলে থাকেন। তাঁর উপমার অলংকরণ ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ যা সমস্ত যুগের কবিদের কাছে সমানভাবে গৃহীত হয়েছে। তাঁর প্রতিটি কাব্যের মাধুর্য, শব্দবিন্যাস, বর্ণনা তাঁকে অসামান্য খ্যাতি প্রদান করেছে। কালিদাস ‘কুমারসম্ভব’ ও ‘রঘুবংশ’ নামে দুটি মহাকাব্য, ছোট ছোট কয়েকটি আখ্যানকাব্য ও গীতিকাব্য, ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’, ‘মালবিকাগ্নিমিত্রম্’ ও ‘বিক্রমোর্ব্বশীয়’ নামে তিনটি নাটক এবং ‘মেঘদূতম্’ ও ‘ঋতুসংহারম্’ নামে দুটি বিখ্যাত গীতিকাব্য রচনা করেন। ‘কুমারসম্ভব’ মহাকাব্যটির মূল বিষয় শিব ও পার্বতীর পুত্র কার্তিকেয়র জন্ম ও তারকাসুর বধ। এই মহাকাব্যে শিব-পার্বতীর দাম্পত্য ও কার্তিকের দেবসেনাপতি হয়ে ওঠার কাহিনী বর্ণিত আছে। অনেকে মনে করেন, এই কাব্যে কালিদাস কার্তিকের চরিত্রটি সমুদ্রগুপ্তের পুত্র কুমারগুপ্তের আদলে গড়ে তুলেছেন। ‘রঘুবংশম্’ মহাকাব্যটি রামায়ণের কাহিনী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কালিদাস রচনা করেছিলেন। ঊনিশটি সর্গে বিভক্ত এই মহাকাব্যে ইক্ষ্বাকুবংশীয় রাজা দিলীপ থেকে শুরু করে অগ্নিবর্ণসহ মোট আঠাশজন রাজার বিররণ আছে। এই মহাকাব্যটি রামায়ণের দ্বারা অণুপ্রাণিত হওয়া সত্ত্বেও কালিদাস নিজস্ব ভাষা ও উপমার সংমিশ্রণে কাব্যে অভিনবত্ব বজায় রেখেছিলেন। এই মহাকাব্যের ঘটনাপ্রবাহই একে আর্কষণীয় করে তুলেছে।
নাটক রচনার ক্ষেত্রে কালিদাস তাঁর প্রতিভার সর্বোত্তম নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর রচিত তিনটি নাটকই নায়িকাপ্রধান। কালিদাস ছিলেন আদ্যন্ত রোমান্টিক এক কবি। তাঁর প্রতিটি নাটকের বিষয়বস্তু নায়ক-নায়িকার প্রেম। কালিদাসের প্রথম রচিত নাটক ‘মালবিকাগ্নিমিত্রম’। এই নাটকের নায়ক বিদিশার রাজা অগ্নিমিত্র ও অন্য এক রাজ্যের রাজকন্যা মালবিকার প্রেমকাহিনী। রাজা অগ্নিমিত্র রাজকন্যা মালবিকার ছবি দেখে তার প্রেমে পড়েন। অন্যদিকে রাজকন্যা মালবিকা দস্যুদের থেকে বাঁচতে বিদিশা রাজ্যে আশ্রয় গ্রহণ করেন। মালবিকাকে দেখে রাজা তাঁকে প্রেম নিবেদন করলেন, কিন্তু রাজার অন্য দুই রাণীর হস্তক্ষেপে রাজা অগ্নিমিত্র ও মালবিকার মধ্যে মিলনে বাধা তৈরি হয়। কৌশলে রাজা কিভাবে মালবিকার সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হলেন তা-ই এই নাটকের বিষয়বস্তু। এই নাটকের নাটকীয়তা, বিভিন্ন চরিত্রের ঘাত প্রতিঘাত, হাস্যরসের প্রয়োগ, শাণিত বুদ্ধির প্রয়োগ ও অভিনব কৌশল প্রয়োগের দ্বারা প্রতিটি চরিত্র বাস্তব হয়ে উঠেছে পাঠকের কাছে। রচনাশৈলীর অনবদ্য নৈপুণ্যে ‘মালবিকাগ্নিমিত্রম’ পাঠকের মন জয় করে নিয়েছে। ‘বিক্রমোর্ব্বশীয়’ পাঁচ অঙ্কে রচিত কালিদাসের আরও একটি অনবদ্য নাটক। রাজা পুরুরবা ও অপ্সরা উব্বর্শীর প্রেম কাহিনী নিয়ে রচিত এই নাটকটি। অভিশাপগ্রস্তা উব্বর্শী মর্ত্যে এসে রাজা পুরুরবার সন্তানের জন্ম দেন। সন্তান জন্মের পরেই উব্বর্শী অভিশাপমুক্ত হয়ে পুনরায় স্বর্গে ফিরে যান। উব্বর্শীর বিরহে রাজা পুরুরবা কাতর হয়ে পড়েন এবং অবশেষে দেবাসুরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য দেবরাজ ইন্দ্র পুরুরবাকে স্বর্গে আমন্ত্রণ জানান। স্বর্গে এসে পুরুরবা উব্বর্শীর সঙ্গে পুনরায় মিলিত হয়ে আজীবন তার সঙ্গসুখ লাভ করেন। এই নাটকে কালিদাস উব্বর্শীর সৌন্দর্য ও পুরুরবার বিরহ-বেদনার এক অপূর্ব বর্ণনা দিয়েছেন। কালিদাসের সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’। সাতটি খণ্ডে রচিত এই নাটকটিতে হস্তিনাপুরের রাজা দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার প্রেমকাহিনী বর্ণিত হয়েছে। কালিদাসের এই নাটকটি বহুল প্রচারিত ও ততোধিক জনপ্রিয়। রাজা দুষ্মন্তের সঙ্গে কণ্বমুনির আশ্রমে শকুন্তলার দেখা হওয়া, রাজার শকুন্তলার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে তাকে গান্ধর্বমতে বিবাহ করা এবং অতঃপর রাজা তাঁর স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ একটি আংটি শকুন্তলাকে দিয়ে আপন রাজ্যে ফিরে যান। পতির চিন্তায় তন্ময় শকুন্তলা দুর্বাসা মুনির সেবায় অমনোযোগী হয়ে অভিশাপের শিকার হন। অভিশাপের কারণে রাজা দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে চিনতে না পেরে তাকে অস্বীকার করেন। পরবর্তীকালে রাজা এক জেলের কাছে নিজের নামাঙ্কিত আংটি দেখে তাঁর স্মৃতি ফিরে পেয়ে পুনরায় শকুন্তলার সঙ্গে মিলনাবদ্ধ হন এবং অবশেষে তাঁদের পুত্র হিসেবে রাজা ভরতের জন্ম হয়। সংস্কৃত ভাষায় যে কতগুলি নাটক রচিত হয়েছে তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এই ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ নাটকটি। এই নাটকের মধ্যে দিয়ে কালিদাস প্রেমকে তপস্যা হিসেবে ব্যক্ত করেছেন। ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ নাটকটি বিশ্ব সাহিত্যে এক বিশেষ ভূমিকা রাখে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে ব্রিটিশ ভাষাতাত্ত্বিক স্যার উইলিয়াম জোন্স ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’-এর রসে নিমজ্জিত হয়েছিলেন। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ অনূদিত হয়েছে। ‘মেঘদূতম্’ গীতিকাব্যটি কালিদাসের এক অসামান্য কাব্য। এই কাব্যের বিষয়বস্তু বর্ষা ঋতু ও তার আগমনে প্রেয়সী মনের আকুলতা। বর্ষার আগমনে প্রিয় মানুষের সঙ্গে মিলনের আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়ে ওঠে। কিন্তু প্রেয়সীর অদর্শনে বিরহের করুণ আর্তি ও তার কাছে বার্তা পৌঁছানোর যে ব্যাকুলতা তাই এই কাব্যের মূল বিষয়বস্তু। ১১৮টি শ্লোক নিয়ে রচিত এই গীতিকাব্যের প্রধান চরিত্র যক্ষ ও তাঁর পত্নী। মন্দাক্রান্তা ছন্দে রচিত কালিদাসের ‘মেঘদূত’ পূর্বমেঘ ও উত্তরমেঘ নামে দুটি খণ্ডে বিভক্ত। যক্ষ ছিলেন ধনপতি কুবেরের সেবক যিনি বাস করতেন কুবেরের রাজ্য অলকাপুরীতে। একদিন তাঁর অন্যমনস্কতায় হাতির পাল কুবেরের বাগান নষ্ট করে দিলে কুবের তাঁকে নির্বাসিত করেন রামগিরিতে। বর্ষার আগমনের সঙ্গে যক্ষের মনে তাঁর পত্নীর বিরহে মেঘের কাছে বার্তা পাঠানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে। প্রথম খণ্ড পূর্বমেঘে রয়েছে কাব্যের ভূমিকা, নায়ক-নায়িকার পরিচয়, যক্ষের নির্বাসন এবং যক্ষের নির্বাসিত স্থান রামগিরি থেকে যক্ষপত্নীর নিবাস অলকাপুরীতে যক্ষের বার্তা নিয়ে মেঘের যাত্রাপথের অপূর্ব বর্ণনা আর এই কাব্যের উত্তরমেঘ অংশে রয়েছে ধনকুবেরের প্রাসাদ আলকপুরীর বৈভব বিলাসের বর্ণনা ও যক্ষ প্রিয়ার সৌন্দর্যের বর্ণনা। কালিদাসের ‘ঋতুসংহার’ কাব্যটি ছয়টি ঋতুর সৌন্দর্য্যের বর্ণনা নিয়ে রচিত।
কালিদাসের নাটক ও মহাকাব্যগুলির প্রভাব বিশ্বসাহিত্যে পরিলক্ষিত হয়। দেশ-কালের সীমানা ছাড়িয়ে কালিদাসের রচনা জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। দেশে ও বিদেশের বহু কবি, লেখক তাঁর রচনার দ্বারা অণুপ্রাণিত হয়েছেন। নাটক, গান, থিয়েটার, কবিতা সর্বক্ষেত্রে কালিদাসের রচনার এক শক্তিশালী প্রভাব আমরা দেখতে পাই। স্যার উইলিয়াম জোন্স ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেন ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ নাটকটি। পরবর্তী একশ বছরে বারোটি ইউরোপীয় ভাষায় মোট ৪৬ বার অনূদিত হয়েছে ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’। চিনে জি. জিয়ানলিন ১৯৫৬ সালে এই কাব্যের অনুবাদ করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫৪ সালে এবং অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯৫ সালে বাংলায় অনুবাদ করেন এই নাটকটি। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘শর্মিষ্ঠা’, ‘পদ্মাবতী’ ,’কৃষ্ণকুমারী’ ইত্যাদি নাটকের সংলাপ, কাহিনী ও চরিত্রের নামকরণ কালিদাসের মহাকাব্যের দ্বারা বহুলভাবে প্রভাবিত হয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসেও কালিদাসের প্রভাব দেখা যায়। কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর ‘সারদামঙ্গল’, ‘নিসর্গ সন্দশর্ন’ কাব্যের শ্লোকগুলি কালিদাসের রচনার দ্বারা প্রভাবিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কালিদাসের ‘মেঘদূত’, ‘শকুন্তলা’ ও ‘কুমারসম্ভব’ দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছিলেন। ১৮১৬ সালে লিও পোল্ড শেফার নামে এক নাট্যকর্মী প্রায় এক দশক ধরে ‘শকুন্তলা’কে নিয়ে একটি অপেরায় কাজ করেছিলেন বলে জানা যায়। ১৮৫৩ সালে কার্ল ফর্ণ পারফালের প্রথম মঞ্চস্থ নাটক ছিল ‘শকুন্তলা’। ১৯৩১ সালে দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রকার এইচ এম রেড্ডি ‘কালিদাস’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ১৯৬১ সালে ভি শান্তারাম কালিদাসের শকুন্তলাকে নিয়ে ‘স্ত্রী’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ১৯৮৩ সালে রাজকুমার ও জয়াপ্রদাকে নিয়ে ‘কবিরত্ন কালিদাস’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়।
স্যার উইলিয়াম জোন্স অগাধ পাণ্ডিত্য ও সৃজনশীলতার জন্য কালিদাসকে ‘প্রাচ্যের শেক্সপীয়ার’ আখ্যা দিয়েছিলেন। কালিদাসের পরবর্তী কবি জয়দেব তাঁকে ‘কবিকুলগুরু’, ‘কবিদের অধিপতি’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
কালিদাসের মৃত্যু নিয়েও কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে অনুমান করা হয় খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতকে কালিদাসের মৃত্যু হয়।