মাও সে তুং

মাও সে তুং

সভ্যতার ইতিহাস যেসব মহান বিপ্লবীর আবির্ভাবকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে তাঁদের কৃতিত্বের কারণে, তাঁদের মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম চিনের কমিউনিস্ট বিপ্লবী মাও সে তুং (Mao Ze dong)। গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের প্রতিষ্ঠার মূল কাণ্ডারি ছিলেন এই সৈনিক তথা রাষ্ট্রনায়ক। আমৃত্যু তিনি চিনা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব সামলেছিলেন। মার্কস এবং লেনিনের আদর্শকে বিপ্লবের পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন মাও। মার্কসবাদী তাত্ত্বিক হিসেবে তাঁর খ্যাতি জগৎজোড়া। তাঁর প্রচারিত আদর্শ বিশ্বে ‘মাওবাদ’ নামে পরিচিত। চিনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক পরিবর্তনে মাও সে তুংয়ের শাসনকালকে স্মরণ করা হয় গুরুত্বের সঙ্গে। নারীর অধিকার, স্বাস্থ্যসেবা, প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতি মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে রূপ পায়। আবার তাঁর শাসনকালে চিনা দুর্ভিক্ষের মতো কলঙ্কিত অধ্যায় মাওকে একইসঙ্গে এক বিতর্কিত ব্যক্তিত্বেও পরিণত করেছে। রাজনীতির পাশাপাশি অবসরে সাহিত্যচর্চাও করতেন তিনি।

১৮৯৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর চিনের হুনান প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত শাওশান গ্রামে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে মাও সে তুং-এর জন্ম হয়। তাঁর বাবা মাও ইছাং (Mao Yichang) প্রথমদিকে একজন দরিদ্র চাষী ছিলেন ঠিকই কিন্তু পরবর্তীকালে নিজের ক্ষমতায় তিনি শাওশান গ্রামের অন্যতম ধনী কৃষকে পরিণত হন। মাওয়ের মা ওয়েন কিমেই (Wen Qimei) ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ। মাও নিজেও একজন বৌদ্ধ হয়েছিলেন কিন্তু কিশোর বয়সেই সে বিশ্বাস ত্যাগ করেন৷ মাওয়ের আরও দুই ভাইয়ের নাম জেমিন ও জেতান এবং জেজিয়ান নামে তাঁর এক বোনও ছিল যাকে তাঁর বাবা-মা দত্তক নিয়েছিলেন। ৮ বছর বয়সে মাওকে শাওশান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে কনফুসিয়ানিজমের মূল্যবোধের পদ্ধতি শেখেন তিনি। যদিও কনফুসিয়ান নৈতিকতার প্রচারকারী ধ্রুপদী চিনা গ্রন্থগুলি তাঁর পছন্দ হয়নি, বরং ‘রোম্যান্স অব দ্য থ্রি কিংডম’-এর মতো ক্লাসিক উপন্যাসগুলি উপভোগ করতেন তিনি৷ ১৩ বছর বয়সে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হলে মাওয়ের বাবা তাঁর সঙ্গে আঠারো বছর বয়সী লুও ইক্সিউয়ের বিবাহ দেন। যদিও এই বিবাহ অস্বীকার করে মাও দূরে সরে যান। ১৯১০ সালে লুও ইক্সিউয়ের মৃত্যু হয়। ১৯২৮ সালে বিপ্লবী হে জিজেনকে (He Zizhen) বিবাহ করেন মাও। জিজেন ছয়টি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন।

ঝেং গুয়ানইংয়ের পুস্তিকা পড়ে রাজনৈতিক চেতনা গড়ে উঠতে থাকে মাওয়ের। সেই বইটি প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের পক্ষে সওয়াল করে। তিনি জর্জ ওয়াশিংটন এবং নেপোলিয়ন বোনাপার্টের উত্থান দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। মাও পরিবার ছেড়ে প্রতিবেশী কাউন্টিতে ডংশায় উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য চলে যান। তারপর ১৯১১ সালে চাংশায় যান মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনার জন্য। ১৯১১ সালেই দক্ষিণ চিন জুড়ে সেনাবাহিনী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সিনহাই বিপ্লবের সূচনা করেন এবং বিপ্লবকে সমর্থন করে মাও সেনাবাহিনীতে ব্যক্তিগত সৈনিক হিসেবে যোগ দেন কিন্তু যুদ্ধে তিনি জড়িত ছিলেন না। ১৯১২ সালে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন এবং এক সংবাদপত্র থেকে সমাজতন্ত্রের ধারণার সঙ্গে পরিচিত হন।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

পরবর্তী কয়েকবছর মাও পুলিশ একাডেমি, একটি সাবান-উৎপাদন স্কুল, একটি আইন বিদ্যালয়, একটি অর্থনীতির স্কুল এবং সরকার পরিচালিত চাংশা মিডল স্কুলে ভর্তি হন কিন্তু তারপরেও পড়াশোনা সমাপ্ত করতে পারেননি। বরং স্বাধীনভাবে তিনি অধ্যয়ন করতে থাকেন এবং চাংশার লাইব্রেরিতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। সেখানে রুশো, মিল, স্পেন্সার, ডারউইনদের মতো পশ্চিমি চিন্তাবিদ এবং দার্শনিকদের ভাবনার সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। ফ্রেডরিক পলসেন যে ব্যক্তিত্ববাদের উপর জোর দিয়েছিলেন, মাওকে তা প্রভাবিত করেছিল। মাও নিজে একজন শিক্ষক হতে চাইতেন, সে কারণে চাংশার চতুর্থ স্কুলে ভর্তি হন তিনি। সেই স্কুল পরে হুনানের ফার্স্ট নর্মাল স্কুলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। জনপ্রিয় ছাত্র ছিলেন মাও এবং ১৯১৫ সালে স্টুডেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারিও হন তিনি। মাও ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর স্টুডেন্ট সেল্ফ গভর্নমেন্ট’ সংগঠিত করেন এবং স্কুলের নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেতৃত্ব দেন। ১৯১৭ সালের ‘নিউ ইউথ’ পত্রিকায় মাওয়ের প্রথম প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ১৯১৭ সালের বসন্তে তিনি ছাত্রদের স্বেচ্ছাসেবক সেনাবাহিনীর কমাণ্ডের জন্য নির্বাচিত হন যা স্কুলকে লুটপাটকারী সৈন্যদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য গঠিত হয়েছিল। যুদ্ধের কৌশলগুলির প্রতি উৎসাহের কারণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রতি গভীর আগ্রহ অনুভব করেন মাও সে তুং। ১৯১৮ সালের এপ্রিলে পিপলস স্টাডি সোসাইটির সংস্কার করেন তিনি। ১৯১৯ সালের জুন মাসে তৃতীয় স্থান অধিকার করে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন মাও সে তুং।

এরপর মাও বেজিং চলে যান। সেখানে তাঁর পরামর্শদাতা ইয়াং চাংজি তাঁকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান লি দাঝাও-এর সহকারী হিসেবে কাজ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাওকে তার গ্রামীণ হুনানি উচ্চারণ এবং নিম্ন অবস্থানের কারণে অন্যান্য ছাত্ররা তিরস্কার করেছিল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন ও সাংবাদিকতা সমিতিতে যোগ দিয়েছিলেন। চাংশাতে, মাও সিউইয়ে ​​প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইতিহাস শেখানো শুরু করেছিলেন এবং হুনান প্রদেশের ডুয়ানপন্থী গভর্নর, দুর্নীতিগ্রস্ত ঝাং জিংইয়াও-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করেছিলেন। মে মাসের শেষদিকে হুনানিজ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। ১৯১৯ সালে জিয়াং ‘রিভার রিভিউ’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতে থাকেন। ঝাং স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন নিষিদ্ধ করার পরেও মাও উদারপন্থী ম্যাগাজিন ‘জিন হুনান’ প্রকাশ করতে থাকেন। চিনের সমাজে মাও নারীদের মুক্তির জন্য নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বেশ কিছু প্রবক্তাদের আহ্বান জানান। ১৯১৯ সালের গ্রীষ্মকালে মাও সে তুং চাংশায় বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তুলতে সাহায্য করেন, যাদের লক্ষ্য ছিল ছাত্র, বণিক এবং শ্রমিকদের একত্র করা ও জাপানের বিরোধিতা করতে সরকারকে বাধ্য করা। সেসময় তাঁর লেখাগুলি লাল পতাকাধারী সেনাদের এবং ১৯১৭ সালের রাশিয়ান বিপ্লবের কথায় ভরে থাকত।  সাংহাইতে, পুরনো শিক্ষক ও কুওমিনতাং জাতীয় দলের সদস্য ই পেইজি মাওকে তান ইয়াঙ্কাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করান যিনি ঝাংয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিলেন। মাও চাংশার ছাত্রদের সংগঠিত করে তানকে সাহায্য করেন। ১৯২০ সালেই ফার্স্ট নর্মাল স্কুলের জুনিয়র বিভাগের প্রধান শিক্ষক হন মাও। সেবছরই শীতকালে ইয়াং কাইহুইকে (Yang Kaihui) বিবাহ করেন তিনি। ১৯২০ সালেই কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর অনুবাদ পড়ে মাও মার্কসবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। ১৯২১ সালে সাংহাইয়ের ফ্রেঞ্চ কনসেশনে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। চিনা কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে ১৩ জন প্রতিনিধির মধ্যে মাও নিজেও উপস্থিত ছিলেন। চাংশায় তিনি এই সমিতির একটি শাখা স্থাপন করেন। একটি কালচারাল বুক সোসাইটিও গঠন করেন তিনি যা কিনা হুনান জুড়ে বিপ্লবী সাহিত্য প্রচারের জন্য একটি বইয়ের দোকান খুলেছিল। হুনানের স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনেও জড়িত ছিলেন তিনি। চাংশায় অবস্থিত হুনান শাখার পার্টি সেক্রেটারি ছিলেন তিনি। ১৯২১-এর আগস্ট মাসে সেল্ফ-স্টাডি ইউনিভার্সিটি গঠন করে নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে লড়াই করেন তিনি।

লেনিনের পরামর্শ গ্রহণ জাতীয় বিপ্লবের ভালোর জন্যই কমিউনিস্ট সদস্যরা কেএমটি-এর বুর্জোয়া গণতন্ত্রীদের সঙ্গে জোট বাঁধতে রাজি হয়। কমিউনিস্ট পার্টির তৃতীয় কংগ্রেসে পার্টির প্রতিনিধিরা কেএমটি-এর সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করলে মাও তার সমর্থন করেন এবং পার্টি কমিটিতে নির্বাচিত হন। ১৯২৪-এর প্রথমদিকে প্রথম কেএমটি কংগ্রেসে মাও কেএমটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বিকল্প সদস্য নির্বাচিত হন এবং নগর ও গ্রামীণ ব্যুরোতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের জন্য চারটি প্রস্তাব পেশ করেন। ১৯২৬-এর মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি কেএমটির কৃষক আন্দোলন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ মেয়াদের দায়িত্ব পালন করেন। কুওমিনতাং পার্টির নতুন নেতা চিয়াং কাই-শেকের জাতীয় বিপ্লবী সেনাবাহিনীকে সমর্থন করেন মাও। ১৯২৭ সালের এপ্রিলে, মাও কেএমটি-এর পাঁচ সদস্যের কেন্দ্রীয় ভূমি কমিটিতে নিযুক্ত হন, কৃষকদের খাজনা দিতে অস্বীকার করার আহ্বান জানান। ১৯২৭ সালে কেএমটি থেকে সব কমিউনিস্টদের বহিষ্কার করা হয়। সাংহাইতে কুওমিনতাং নেতা চিয়াং কাইশেকের নেতৃত্বে ৫০০০ কমিউনিস্টকে হত্যা করা হয়। চিনা কমিউনিস্ট পার্টি শ্রমিক ও কৃষকদের নিয়ে যে ‘রেড আর্মি’ গঠন করে, মাও তার কমাণ্ডার-ইন চিফ নিযুক্ত হন এবং কুওমিনতাং-এর বিরুদ্ধে এক ফসল আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন হুনান জুড়ে কৃষক অভ্যুত্থান ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। সেসময় ‘চাংশা’ নামে প্রথম কবিতা লেখেন মাও। জিংগাংশান শহরে পাঁচটি গ্রাম একত্র করে মাও স্ব-শাসিত রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলেন ও বিপ্লবের জন্য সেনাবাহিনীর সংখ্যা বাড়াতে থাকেন।

১৯৩০ সালে মাও তার নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে দক্ষিণ-পশ্চিম জিয়াংজি প্রাদেশিক সোভিয়েত সরকার গঠন করেন। নভেম্বরে কমিউনিস্ট পার্টি জিয়াংজিকে চিনের সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৩১ সালে সেই প্রজাতন্ত্রের চেয়ারম্যান হন মাও। জিয়াংজি পাহাড়ে কেএমটি বাহিনী রেড আর্মিকে ঘিরে ফেললে মাওয়েরা পিছু হটতে থাকেন। ১৯৩৪-এর ১৪ অক্টোবরে মাও তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে যাত্রা শুরু করেন এবং ১৮টি পর্বতশ্রেণি ও ২৪টি নদী পেরিয়ে ৬০০০ হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শানশি প্রদেশে পৌঁছন তিনি ১৯৩৫-এর অক্টোবরে। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে বিখ্যাত ‘লং মার্চ’ নামে পরিচিত। এই ঘটনা মাওকে কমিউনিস্ট পার্টির একজন নামজাদা নেতায় পরিণত করেছিল। ১৯৩৫ সালের নভেম্বরে তিনি সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালে জাপান চিন আক্রমণ করে। ১৯৩৭ সালের মে মাসে পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য ইয়ানানে একটি কমিউনিস্ট সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৩৮ সালে হে জিজেনকে ডিভোর্স দিয়ে অভিনেত্রী জিয়াং কিংকে (Jiang Qing) বিবাহ করেন মাও। জাপানের আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে মাও এবং কেএমটি পুনরায় জোটবদ্ধ হয়।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয় ঘটলে চিনা সৈনিকদের মধ্যে আবার গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। ১৯৪৩ সালে কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী চিন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করেন মাও এবং ডিসেম্বরে এই পিপলস রিপাবলিক অব চায়নার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। কোরিয়ান যুদ্ধে রেড আর্মির একটি স্বেচ্ছাসেবক শাখাকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মাও। ১৯৫১ সালে শহুরে এলাকাকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রয়াসে ‘থ্রি অ্যান্টি/ফাইভ অ্যান্টি ক্যাম্পেনস’ নামে একটি আন্দোলন শুরু করেন তিনি। ক্ষমতা একত্রীকরণের পর ১৯৫৩ সালে মাও প্রথম পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনা চালু করেন দ্রুত শিল্পোন্নয়নের উদ্দেশ্যে। প্রথম পরিকল্পনা সফল হলে ১৯৫৮ সালে দ্বিতীয় পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনা সূচনা করেন মাও, যেটি ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’ নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে চিনকে কৃষিভিত্তিক দেশ থেকে শিল্পভিত্তিক দেশে পরিণত করতে চেয়েছিলেন মাও। এর ফলে চিনদেশে ভয়ানক দুর্ভিক্ষের সূচনা হয়। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত ৩ কোটি কৃষকের মৃত্যু হয়েছিল এই দুর্ভিক্ষের জেরে।

মাও সে তুং ১৯৫৯ সালের ২৭ এপ্রিল চিনের রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে কমিউনিস্ট পার্টি এবং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যানের মতো অন্যান্য শীর্ষ পদে বহাল ছিলেন তিনি। মাও ১৯৬৬ সালে মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা করেন। মাওয়ের আহ্বানে তখন তরুণ রেড গার্ডরা চিনের প্রাচীন রীতিনীতি, সংস্কৃতি, প্রাচীন শিল্পকর্মগুলি ধ্বংস করতে থাকে, তারা নিজস্ব ট্রাইবুনাল গঠন করে। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়, চিনের প্রায় সমস্ত স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বহু নাগরিককে কারারুদ্ধ এবং অনেক বুদ্ধিজীবিকেও হত্যা করা হয় এসময়। ১৯৬৯ সালে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছিল।

মাও একজন বিশিষ্ট লেখকও ছিলেন। তাঁর জীবিতকালেই প্রকাশিত হয় ‘মাও সে তুংয়ের নির্বাচিত রচনা’। তাঁর বক্তৃতাগুলিকে একত্র করেও গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও ‘স্নো’, ‘দ্য লং মার্চ’, ‘দ্য ডবল নাইনথ’-এর মতো কবিতা লিখেছিলেন তিনি।

১৯৭৬-এর ৯ সেপ্টেম্বর ৮২ বছর বয়সে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মাও সে তুং য়ের মৃত্যু হয়।

One comment

  1. পিংব্যাকঃ লু সুন | সববাংলায়

আপনার মতামত জানান