জীবনানন্দ পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের একজন অগ্রজপ্রতিম কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় (Shakti Chattopadhyay)। বাংলা কবিতার জগতে তিনি যেমন এক বিস্ময়, তেমনি ব্যক্তিজীবনের বোহেমিয়ান স্বভাবের কারণেও তিনি বহুচর্চিত। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার থেকেও বড় বেশি চর্চিত তাঁর অতিরিক্ত মদ্যপান, খামখেয়ালি মনোভাব ইত্যাদি। আনন্দবাজারে পাকাপাকি চাকরি করার পাশাপাশি লিখেছেন একের পর এক বিখ্যাত সব কাব্যগ্রন্থ। ১৯৮৩ সালে ‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাব’ কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘হে প্রেম হে নৈঃশব্দ্য’, ‘ধর্মেও আছো জিরাফেও আছো’, ‘সোনার মাছি খুব করেছি’, ‘হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান’, ‘প্রভু নষ্ট হয়ে যাই’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথভাবে ‘যুগলবন্দী’, ‘সুন্দর রহস্যময়’ এই দুটি কাব্যগ্রন্থ লিখেছিলেন তিনি। মৌলিক কবিতা রচনার পাশাপাশি প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের ‘ওমরখৈয়াম’, কালিদাসের ‘মেঘদূত’, ‘কুমারসম্ভব’ কাব্যের অনুবাদ করেছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া মির্জা গালিব, পাবলো নেরুদা, হাইনরিখ হাইনে, মায়াকোভস্কি, ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা প্রমুখের বহু কবিতাও তাঁরই অনুবাদে প্রকাশ পেয়েছে। কাব্যগ্রন্থের পাশাপাশি তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল – ‘কুয়োতলা’, ‘কিন্নর কিন্নরী’, ‘অবনী বাড়ি আছো’, ‘দাঁড়াবার জায়গা’ ইত্যাদি। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘ধর্মে আছো জিরাফেও আছো’ কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘অবনী বাড়ি আছো’ শীর্ষক কবিতাটি প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং বহুলচর্চিত হয়।
১৯৩৩ সালের ২৫ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণার অন্তর্গত বহড়ুতে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয়। তবে তাঁর জন্মসাল ও জন্মতারিখ নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। সমীর সেনগুপ্তের মতে, ১৯৩৩ সালের ২৭ নভেম্বর শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয়। আবার তৃতীয় শ্রেণিতে স্কুলে পড়াকালীন তাঁর দাদু সুবোধচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়ের সুপারিশে স্কুলের খাতায় তাঁর জন্মদিন লেখা ছিল ১৯৩৪ সালের ১৩ জুলাই। পরে আবার আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজের সূত্রে পত্রিকার তরফে জানা যায়, তাঁর জন্মসাল ১৯৩৪। তবে ১৯৩৩-এর ২৫ নভেম্বর তারিখটিকেই পরে সর্বজনস্বীকৃত হিসেবে মান্য করা হয়। জন্মপত্রিকায় তাঁর নাম লেখা ছিল চন্দ্রশেখর আর তাঁর ডাকনাম ছিল হাবুল। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মাতামহই তাঁর নাম রাখেন শক্তি। তাঁর বাবার নাম বামানাথ চট্টোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম কমলা দেবী। শবাসনা নামে তাঁর এক দিদি এবং ভক্তিনাথ নামে তাঁর এক ভাই ছিলেন। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস ছিল হুগলী জেলার আরামবাগ মহকুমার কৃষ্ণনগর গ্রামে। তাঁর বাবা পেশায় ছিলেন একজন টোলের পণ্ডিত। পরবর্তীকালে ম্যালেরিয়া মহামারীর প্রকোপে তাঁরা সেখান থেকে চলে আসেন বহড়ুতে। বাল্যকালে বাবাকে হারিয়ে দাদু সুবোধ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছেই বড়ো হন শক্তি। পরবর্তীকালে মীনাক্ষী দেবীর সঙ্গে বিবাহ হয় তাঁর। তাঁদের এক কন্যা এবং এক পুত্র।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে গ্রামের হারু পণ্ডিতের পাঠশালায় শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। তালপাতায় ধারাপাত, অক্ষর ইত্যাদি শেখেন তিনি। দাদুর কাছে শৈশবে রামায়ণ, মহাভারতের গল্প শুনতেন তিনি। ১৯৪৩ সালে বহড়ুর হাই ইংলিশ স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন শক্তি। তাঁর দাদু সংস্কৃত ব্যাকরণ ও অভিধানে পারদর্শী হওয়ায় রোজই তাঁকে কুড়িটি করে শব্দ লিখে মুখস্থ করতে দিতেন। বাল্যকালে স্কুলের অঙ্কের খাতায় অঙ্কের বদলে কবিতা লিখেছিলেন তিনি যা তাঁর কবিতাচর্চার প্রথম সূত্রপাত। বাবার মৃত্যুর পরে সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার শেষে কলকাতায় চলে আসেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। মহারাজা কাশিমবাজার পলিটেকনিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। সেই সময় ভাই ও মায়ের সঙ্গে কলকাতায় তাঁর মামা ভবানী গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতেই ৬০ নং গোপীমোহন দত্ত লেনে থাকতেন শক্তি। স্কুলে পড়াকালীনই ভূগোলের শিক্ষক হরিপদ কুশারীর অনুপ্রেরণায় রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং শোভাবাজার লোকাল কমিটিতে কমিউনিস্ট হিসেবে সদস্যপদ লাভ করেন তিনি। ১৯৪৯ সালে নিজের বাড়িতে স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে ‘নবোদয়’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন শক্তি। এই পত্রিকাতেই জানা যায় তাঁর প্রথম ছদ্মনাম ছিল স্ফূলিঙ্গ সমাদ্দার। ধীরে ধীরে পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বন্ধ হল তাঁর। ১৯৫১ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক উত্তীর্ণ হয়ে মির্জাপুর সিটি কলেজে ভর্তি হন তিনি। মামার অনুরোধেই তিনি বাণিজ্য পড়া শুরু করেন। ১৯৫৩ সালে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষাতেও প্রথম বিভাগে প্রথম হন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু এরপরে প্রেসিডেন্সি কলেজে বাংলায় সাম্মানিক সহ ভর্তি হন স্নাতক স্তরে। অনিয়মিত জীবন-যাপনের কারণে কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তিনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বুদ্ধদেব বসুর পরামর্শে তুলনামূলক সাহিত্য পড়তে শুরু করলেও সেই পড়াও সম্পূর্ণ করতে পারেননি তিনি। এই সময় ‘শঙ্খ’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় যেখানে প্রথম তাঁর ‘কুয়োতলা’ উপন্যাসের খসড়া প্রকাশ পেয়েছিল। ধীরে ধীরে কবিতাচর্চাই তাঁর জীবনের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়।
কর্মজীবনে কোথাও বেশিদিন স্থায়ীভাবে কাজ করেননি তিনি। প্রথমে ১৯৫৯ সালে স্যাক্সবি ফার্মে কাজ পান তিনি। পরে ১৯৬১ সালে হিন্দুস্তান মোটরসে যোগ দেন ভালো পদে ভালো বেতনে, কিন্তু সেই কাজে বেশিদিন থিতু হতে পারেননি শক্তি। দুইবার চাকরি ছাড়ার পরে জীবিকার তাগিদে টিউটোরিয়াল হোম খুলে ইংরাজি পড়াতে শুরু করেন তিনি। ক্ল্যারিয়ান বিজ্ঞাপন সংস্থায় এই সময় ফ্রিল্যান্সে কপিরাইটারের কাজও করতেন শক্তি। এই সময়ই মীনাক্ষী দেবীকে বিবাহ করেন তিনি আর বিবাহের পরেই ১৯৭০ সালে আনন্দবাজার পত্রিকায় পাকাপাকিভাবে একটা চাকরি জুটে যায় তাঁর। এই সংস্থাতেই ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। শেষ জীবনে বিশ্বভারতী বিদ্যালয় তাঁকে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এবং সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করতে তিনি কিছুদিন বিশ্বভারতীতে পড়িয়েওছিলেন।
তাঁর লেখা সনেটধর্মী একটি কবিতা ‘যম’ প্রথম বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছিল। এই ‘কবিতা’ পত্রিকাতেই শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মোট ১৫টি কবিতা প্রকাশ পেয়েছিল। নিতান্ত একটি কাব্যগ্রন্থের সমালোচনার পরে বন্ধুস্থানীয়ের দেওয়া কবিতা লেখার চ্যালেঞ্জকে স্বীকৃতি জানানোর মধ্য দিয়েই তাঁর কবিতাচর্চার শুরু হয়। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পায় ‘হে প্রেম হে নৈঃশব্দ্য’ নামে ১৯৬১ সালে ‘গ্রন্থজগৎ’ প্রকাশনার প্রকাশক দেবকুমার বসুর হাত ধরে। এই কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পিছনে এক মজার কাহিনী লুকিয়ে আছে। প্রথমে শক্তি চট্টোপাধ্যায় এর নাম ঠিক করেন যম, পরে তা দুবার পাল্টান। দ্বিতীয়বারে নাম দেন নিকষিত হেম এবং তৃতীয়বারে সেই নাম বদলে রাখেন কেলাসিত স্ফটিক। কিন্তু তাতেও মন সায় দিচ্ছিল না তাঁর। প্রকাশের অন্তিমকালে কাব্যগ্রন্থের নাম বদলে তিনি রাখেন ‘হে প্রেম হে নৈঃশব্দ্য’ নামটি। প্রতিবার প্রুফ দেখার সময় অধিকাংশ কবিতা বাতিল করে আবার নতুন কবিতা সংযোজন করে দিতেন তিনি। সেই সময় লেটারপ্রেসে ব্লক তৈরি করে ছাপা হতো বই। সেই ব্লক কতবার তৈরি করে ভেঙে আবার নতুন করে তৈরি করা হয় এই বইটির জন্য। শুধুমাত্র প্রকাশকের প্রশ্রয় ছিল বলে অবশেষে এভাবেই শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। কৃত্তিবাস পত্রিকার সদস্য ও লেখকদের সঙ্গে একত্রে বহু সময় চাইবাসা, ছোটোনাগপুর মালভূমি, চক্রধরপুর, মধুপুর, সাঁওতাল পরগণা ঘুরে বেড়াতেন শক্তি। মধুটোলা পাড়ায় সুধীর চট্টোপাধ্যায়ের পঞ্চম কন্যা শীলার সঙ্গে প্রথম প্রণয়ে আবদ্ধ হয়েছিলেন শক্তি, কিন্তু তা স্থায়িত্ব পায়নি কোনোদিনই। ১৯৬১ সালে সমীর রায়চৌধুরীর ছোটোভাই মলয় রায়চৌধুরীর সঙ্গে আলাপ হওয়ার সুবাদে ‘হাংরি জেনারেশন’-এর প্রথাবিরোধী সাহিত্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এই সময় থেকে ১৯৬৫ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত ‘হাংরি’দের সঙ্গে শক্তির সখ্যতা ছিল। ‘হাংরি সাহিত্য’ বিষয়ে একটি গদ্যও লিখেছিলেন তিনি ‘কবিতা বিষয়ক প্রস্তাব’ নামে। পরে এই হাংরি জেনারেশনের কবিদের বিরুদ্ধে অশ্লীল সাহিত্য রচনার অপবাদে মামলা উঠলে, আদালতে ১৯৬৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শক্তি চট্টোপাধ্যায় রাজসাক্ষী দেন। অ্যালেন গিন্সবার্গ ১৯৬২ সালে কলকাতায় এলে এই হাংরি জেনারেশনের সাহিত্যচর্চা নিতুন মোড় নেয়। গিন্সবার্গের বোহেমিয়ান মাদকাসক্ত উচ্ছৃঙ্খল জীবনাচরণ, সমকামিতা, প্রকাশ্য যৌনাচার ইত্যাদির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যে রুচির জন্ম হয়েছিল, শক্তি ছিলেন তার থেকে অনেক দূরে।
আনন্দবাজারের অধীনে ছোটোদের জন্য ‘আনন্দমেলা’ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্বও একসময় পেয়েছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। আনন্দবাজারের কর্মজীবনেই তিনি সবথেকে বেশি লিখেছেন। নিয়মিতভাবে কবিতা, ছড়া, ভ্রমণকাহিনি, গদ্য এবং উপন্যাস লিখেছেন শক্তি। ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি মাসে ‘কবিতা সাপ্তাহিকী’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতে থাকেন শক্তি। মীনাক্ষী দেবীর সঙ্গে বিবাহ হলেও শক্তির জীবন জুড়ে ছিল প্রবল মদ্যপান, অনিয়মিত জীবন যাপন, খামখেয়ালি মনোভাব এবং বোহেমিয়ান আদর্শ। তাঁকে নিয়ে বহু কাহিনী চর্চিত বাঙালিদের মধ্যে। শোনা যায়, অসুস্থ কন্যার জন্য ওষুধ আনতে বেরিয়ে তিনি নাকি চাইবাসায় ঘুরতে চলে গিয়েছিলেন। মাঝেমাঝেই নিজের কন্যাকে নিয়ে কোথাও বেরোলে, তাঁকে রেখেই হঠাৎ উধাও হয়ে যেতেন তিনি। পরে তাঁরই বন্ধুস্থানীয় কেউ তাঁর কন্যাকে বাড়ি পৌঁছে দিত। পারিবারিক দায়িত্ববোধ ছিল না তাঁর আর এটাই হয়তো তাঁকে প্রকৃত কবিত্বে উন্নীত করেছিল। ‘অবনী বাড়ি আছো’, ‘এ বড়ো সুখের সময় নয়’ ইত্যাদি কবিতায় তাঁর ব্যক্তিজীবনের ছাপ পড়েছে। আজীবন কবিতাকে ‘পদ্য’ বলে আসা শক্তি মনে করতেন কবিতার সাংগাঠনিক শিক্ষা না নিয়ে কবিতা লিখতে আসা অনুচিত।
তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘ধর্মেও আছো জিরাফেও আছো’ (১৯৬৫), ‘সোনার মাছি খুব করেছি’ (১৯৬৭), ‘হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান’ (১৯৬৯), ‘প্রভু নষ্ট হয়ে যাই’ (১৯৭২), ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’ (১৯৭০), ‘অঙ্গুরী তোর হিরণ্যজল’ (১৯৮০), ‘জ্বলন্ত রুমাল’ (১৯৭৫), ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’ (১৯৭৮) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথভাবে ‘যুগলবন্দী’, ‘সুন্দর রহস্যময়’ এই দুটি কাব্যগ্রন্থ লিখেছিলেন তিনি। মৌলিক কবিতা রচনার পাশাপাশি প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের ‘ওমরখৈয়াম’, কালিদাসের ‘মেঘদূত’, ‘কুমারসম্ভব’ কাব্যের অনুবাদ করেছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া মির্জা গালিব, পাবলো নেরুদা, হাইনরিখ হাইনে, মায়াকোভস্কি, ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা প্রমুখের বহু কবিতাও তাঁরই অনুবাদে প্রকাশ পেয়েছে। কাব্যগ্রন্থের পাশাপাশি তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল – ‘কুয়োতলা’ (১৯৬১), ‘কিন্নর কিন্নরী’ (১৯৭৭), ‘অবনী বাড়ি আছো’ (১৯৭৩), ‘দাঁড়াবার জায়গা’ (১৯৮৬) ইত্যাদি। ছোটোদের জন্য ছড়াও লিখেছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় যার মধ্যে উল্লেখ্য ‘পুণ্যিপুকুর পুষ্করিণী’ (১৯৮২), ‘মিষ্টি কথায়, বিষ্টিতে নয়’ (১৯৮৫), ‘বড়োর ছড়া’ (১৯৯৪) ইত্যাদি। তাঁর লেখা ভ্রমণ বিষয়ক গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখ্য ‘উইক এণ্ড ট্যুরিস্ট গাইড’ (১৯৭২), ‘চলো বেড়িয়ে আসি’, ১ম পর্ব (১৯৭৭), ‘চলো বেড়িয়ে আসি’, ২য় পর্ব (১৯৮০) এবং ‘খৈরী, আমার খৈরী’ (১৯৭৬)।
১৯৭২ সালে ত্রিবৃত্ত পুরস্কারে এবং ১৯৭৫ সালে সুরেশচন্দ্র মজুমদার স্মৃতি আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। তাঁর লেখা ‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯৮৩ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন তিনি আর এই কবিতাটিই তাঁর সবথেকে বেশি জনপ্রিয় হয়। জীবৎকালেই তাঁর এই কবিতার বইয়ের ৩৫ হাজার কপি বিক্রি হয়ে যায়। ১৯৯৫ সালে সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গঙ্গাধর মেহের পুরস্কার এবং মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
১৯৯৫ সালের ২৩ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়।
3 comments