বাঙালির হাতের কাছের হিল স্টেশন হল দার্জিলিং। সুযোগ পেলেই বাঙালি ঘুরতে চলে যায় সেখানে। কথাতেই আছে, বাঙালির ঘোরার তিনটে জায়গা হল দীপুদা, অর্থাৎ দীঘা, পুরী আর দার্জিলিং। দার্জিলিংকে বলা হয় “পাহাড়ের রানী”। পাহাড়ি এলাকার মনোরম পরিবেশ, কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিউ, দারুণ চা-এর স্বাদ, ট্রয় ট্রেন সব মিলিয়ে দার্জিলিং এক অন্য স্বাদে ভরা। দার্জিলিং-এ কী দেখবেন সেই স্থানগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত যে স্থানগুলো পায়ে হেঁটে ঘুরতে হয় এবং দ্বিতীয়ত যে স্থানগুলো গাড়ি নিয়ে ঘুরতে হয়। দার্জিলিং-এর দর্শনীয় সেই সমস্ত স্থানগুলো নিচে বিস্তারিত দেওয়া হল।
পায়ে হেঁটে দার্জিলিং-এ কী দেখবেন
দার্জিলিং এ কয়েকটি জায়গা পায়ে হেঁটে ঘুরতে হয়। সেখানে গাড়ি প্রবেশের জায়গা নেই বা হোটেল অঞ্চলের কাছাকাছি হওয়ায় গাড়ি নিয়ে যায় না। জায়গাগুলো নীচে দেওয়া হল –

চৌরাস্তা মল – দার্জিলিং এর প্রাণকেন্দ্র হল চৌরাস্তা মল অঞ্চল। এখানে খোলা জায়গাটিতে মানুষের বসার জন্য ও দার্জিলিংকে উপভোগ করার জন্য খোলা মঞ্চ, চেয়ার এবং বেঞ্চি বানানো আছে। মাঝে মাঝেই বিশেষ দিন উপলক্ষে কোনও না কোনও অনুষ্ঠান হয় সেখানে। মঞ্চের সামনে রয়েছে বিখ্যাত নেপালি কবি ভানুভক্ত আচার্যের সোনালী মূর্তি। মল অঞ্চলে চা হাতে নিয়ে বসে চারপাশে পুরনো স্থাপত্যের বিল্ডিং, কোনও অনুষ্ঠান বা কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিউ দেখতে দেখতে বা প্রিয়জনের সাথে গল্প করতে করতে সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সকালে এখানের ভিউ অসাধারণ। এখানে স্থানীয় দোকানের পাশাপাশি, রেস্টুরেন্ট, গিফটের দোকান, বইয়ের দোকান, কিউরিও শপ, চায়ের দোকান ইত্যাদি রয়েছে। নেহেরু রোড থেকে চৌরাস্তা মলে ওঠবার মুখেই রয়েছে সুন্দর একটি ঝর্না। সকালে সেখানে পাখিদের কোলাহল এবং সন্ধেবেলায় রঙিন ঝর্না দেখতে খুবই ভাল লাগবে।
চৌরাস্তা মলে চারটি রাস্তা এসে মিলেছে বলে একে চৌরাস্তা বলে। প্রথম রাস্তাটি হল নেহেরু রোড। এই রোডেই রয়েছে ট্যুরিস্টদের জন্য সমস্ত দোকান বা রেস্টুরেন্টগুলো। দ্বিতীয় রাস্তাটি ডক্টর জাকির হুসেইন রোড যেখানে রয়েছে স্থানীয় সব দোকান। তৃতীয় এবং চতুর্থ রাস্তাদুটো আসলে একটাই রাস্তা মল রোড যেটা চৌরাস্তা মলের একপ্রান্তে শুরু হয়ে গভর্নর হাউস থেকে বাঁক নিয়ে চৌরাস্তা মলের অন্যপ্রান্তে শেষ হয়েছে। এই মল রোড বরাবর হাঁটতে হাঁটতে কাঞ্চনজঙ্ঘার অনেকগুলো ভিউ পয়েন্ট পাওয়া যায়। যারা গভর্নর হাউসের কাছাকাছি হোটেলগুলোতে থাকবেন, তাঁদের জন্য এই মল রোডের ভিউ পয়েন্টগুলো খুবই কাছে এবং খুবই উপভোগ্যও হবে। রাত ৮টার পর চৌরাস্তার দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে যায়।

সেন্ট অ্যান্ড্রিউ চার্চ – চৌরাস্তা মলের বামদিকের মল রোড ধরে হেঁটে কিছুটা গেলে রাস্তার ওপরেই পড়বে দার্জিলিং-এর অন্যতম পুরনো স্থাপত্য সেন্ট অ্যান্ড্রিউ চার্চ। এই চার্চের দুর্দান্ত ক্লক টাওয়ার ব্রিটিশ স্থাপত্যের একটি চমৎকার উদাহরণ। এই ক্লক টাওয়ারের ঘণ্টা পুরো দার্জিলিং জুড়ে শুনতে পাওয়া যায়। ১৮৪৩ সালে এই চার্চ স্থাপিত হলেও ১৮৬৭ সালে বজ্রপাতের ফলে এর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৮৭৩ সালে চার্চটি পুনঃনির্মাণ করা হয়েছিল। এই চার্চের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বা গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় বস্তুটি হল লেফটেন্যান্ট জেনারেল জর্জ ডব্লিউ আইলমার লয়েডের সমাধিস্তম্ভ, যেটিকে ভারতের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে থেকে হেরিটেজ স্ট্রাকচার বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
অবসার্ভেটরি হিল – চৌরাস্তা মলের ডানদিকের মল রোড দিয়ে একটু এগিয়ে উঁচুতে উঠবার জন্য পাথুরে সিঁড়ি রয়েছে। এই সিঁড়ি দিয়ে উঠে উপরে যে পাহাড়ি এলাকাটি রয়েছে, তাকে অবসার্ভেটরি হিল (Observatory Hill) বলা হয়। অবসার্ভেটরি হিলটির পাদদেশের চারদিক মল রোড দিয়ে ঘেরা। চৌরাস্তার ডানদিকের মল রোড দিয়ে যেমন এখানে ওঠা যায়, তেমনি চৌরাস্তার বামদিকের মল রোড ধরে অনেকটা এগিয়ে ঢালু পাহাড়ি রাস্তা দিয়েও এখানে ওঠা যায়। বর্তমানে এখানে কোনও অবসার্ভেটরি নেই, কিন্তু বেশ কিছু ভিউ পয়েন্ট আছে যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করা যায়। তবে এই দৃশ্য উপভোগ করতে অবশ্যই ভোরবেলা যেতে হবে।

মহাকাল মন্দির – অবসার্ভেটরি হিলের ওপরে অবস্থিত শতাব্দী প্রাচীন একটি মন্দির হল মহাকাল মন্দির। এই মন্দির হিন্দু দেবতা শিবের নামে হলেও মন্দিরটি হিন্দু এবং বৌদ্ধ উভয়েরই উপাসনা কেন্দ্র। এখানে হিন্দু এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতির আশ্চর্য মেলবন্ধন দেখতে পাওয়া যায়। মন্দিরের প্রবেশের মুখেই লাল, নীল, সবুজ, হলুদ বিভিন্ন রঙের পতাকা দেখে অনেকেই একে বৌদ্ধ মঠ ভেবে ভুল করতে পারেন। মন্দিরের মূল আরাধ্য হলেন ভগবান শিব বা মহাকাল এবং তিনটি সোনালী রঙের শিবলিঙ্গ এখানে পূজা করা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এই শিবলিঙ্গগুলি পাহাড়ের চুড়ায় স্বয়ং প্রকট হয়েছিলেন, যা স্বয়ম্ভূ শিবলিঙ্গের প্রতীক বলে মানা হয়। ভগবান শিবের পাশাপাশি এখানে বুদ্ধের মূর্তিও রয়েছে। সেই জন্য এখানে হিন্দু এবং বৌদ্ধ দুই পুরোহিতই দেখতে পাবেন। এখানে শিব ছাড়াও অন্যান্য হিন্দু দেবতাদেরও পূজা করা হয়। সমস্ত কিছু মিলিয়ে এক শান্ত, মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। তবে এখানে বাঁদরের প্রচুর আধিক্য, যদিও তারা দর্শনার্থীদের বিরক্ত করে না তবুও নিজের ব্যাগ, ক্যামেরা, মোবাইল সাবধানে রাখাই শ্রেয়। মন্দির ভোরবেলায় খোলে এবং বিকেলে বন্ধ হয়ে যায়।
লয়েড বোটানিক্যাল গার্ডেন – চৌরাস্তা মল থেকে ১৫-২০ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথের দুরত্বে লয়েড বোটানিক্যাল গার্ডেন (Lloyd Botanical Garden) অবস্থিত। এখানে অন্তত ২৫০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে। এখানে গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না এমন নয়, তবে মল অঞ্চলের কাছে হওয়ায় গাড়ি যেতে চায় না।
.
গাড়ি করে দার্জিলিং-এ কী দেখবেন
উপরে উল্লিখিত জায়গাগুলোই শুধু পায়ে হেঁটে দেখা যায়। এছাড়াও দার্জিলিং-এ দেখার মত প্রচুর জায়গা রয়েছে। সেই জায়গাগুলো গাড়ি বুক করেই যেতে হয়। একদিনে সমস্ত জায়গা ঘোরাও যাবে না। কোনদিনে কোন জায়গাগুলো যেতে চান সেগুলো ট্রাভেল এজেন্ট বা গাড়িচালকের সাথে কথা বলুন। সেই অনুযায়ী আপনার গাড়ির মূল্য বাড়তে বা কমতে পারে। তবে একদিনে গাড়িতে যে কয়টি জায়গা ঘুরতে যাওয়া যায়, সেগুলো মিলিয়ে খরচা মোটামুটি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা পড়বে।

টাইগার হিল – টাইগার হিল থেকে বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফাচ্ছাদিত শৃঙ্গের সৌন্দর্য দেখা দার্জিলিং-এর অন্যতম আকর্ষণ। তবে তার জন্য মোটামুটি রাত সাড়ে ৩টে থেকে ৪টের যেতে হবে টাইগার হিলে। নাহলে প্রচুর ভিড়ে জায়গা পাবেন না। সূর্যোদয়ের সময়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার তুষারাবৃত গিরিশৃঙ্গ যে আগুনের রূপ নেয়, তা লিখে বোঝানো মুস্কিল। বেশ কিছুক্ষণ এখানে থাকতে ইচ্ছে হবে। সময় কখন বেরিয়ে যাবে বুঝতেও পারবেন না। কিছুক্ষণ পর সকালবেলায় কাঞ্চনজঙ্ঘার শৃঙ্গের রঙ দেখবেন কেমন বদলে গেছে। তখন সেটা ধবধবে সাদা। টাইগার হিলে শীতের জামাকাপড় বেশি করে পড়বেন। উচ্চতার কারণে এখানে প্রচুর ঠাণ্ডা থাকে। টাইগার হিলে মূলত কাঞ্চনজঙ্ঘার দারুণ ভিউ দেখতে পাওয়ার জন্য মানুষ যায়। তবে যেদিন টাইগার হিলে যাওয়ার প্ল্যান করবেন সেদিন বেশ কয়েকটি অন্য জায়গা নাও দেখতে পারেন। কারণ চৌরাস্তা মল থেকে এর দুরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। তাই যেতে আসতে খানিকটা সময় লাগবে।

পিস প্যাগোডা এবং জাপানিজ টেম্পেল – চৌরাস্তা মল থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে একটি ধবধবে সাদা বৌদ্ধ স্তূপ রয়েছে যা পিস প্যাগোডা বা শান্তিস্তুপ নামে পরিচিত। জাপানি বৌদ্ধ নিপ্পোনজান ম্যাওহজি সংগঠন, শান্তি বার্তা প্রচারের উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এইরকম শান্তিস্তুপ প্রতিষ্ঠা করেছে। ১৯৭২ সালে নিপ্পোনজান-ম্যাওহজি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নিচিদাত্সু ফুজি এই স্তুপের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই স্তুপটির উচ্চতা ২৮.৫ মিটার এবং এটি দার্জিলিংয়ের সর্বোচ্চ স্তুপ। এই স্তুপের চারপাশে চারটি চকচকে এবং সোনার পালিশ করা বুদ্ধের মূর্তি রয়েছে। এছাড়াও, স্তুপের দেয়ালে গৌতম বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের কাহিনী আটটি বেলেপাথরের প্লেটে খোদাই করা রয়েছে। সাদা ধবধবে এই স্তুপ থেকে দূরে কাঞ্চনজঙ্ঘার সাদা তুষারাবৃত গিরিশৃঙ্গ দেখে মনে এক অন্যরকম শান্তি মেলে।
পিস পাগোডার পাশে একটি জাপানি বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে। এটি নিপ্পোনজান ম্যাওহজি বৌদ্ধ মন্দির নামেও পরিচিত। এখানে প্রতিষ্ঠাতা ফুজি গুরুজির ছবি এবং একটি বুদ্ধের মূর্তি রয়েছে।

বাতাসিয়া লুপ – চৌরাস্তা মল থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে টয়ট্রেনের জন্য তৈরি একটি সর্পিল রেলপথ হল বাতাসিয়া লুপ। এটি ১৯১৯ সালে চালু হয়েছিল। টয় ট্রেনের জয় রাইডে ১০ মিনিটের জন্য ট্রেন এখানে থামে। তবে ট্রেনে না চড়লেও এখানে আলাদাভাবে অবশ্যই যাবেন। এখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোর্খা সৈন্য়, যারা দেশের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিল, তাদের সম্মান জানিয়ে একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে। এই স্মৃতিসৌধের পেছনে কাঞ্চনজঙ্ঘার তুষারাবৃত গিরিশৃঙ্গ দেখা যায়। সে এক অপরূপ দৃশ্য।
দার্জিলিং রোপওয়ে – এখানে রোপওয়েতে চড়তে পারেন। রোপওয়ে থেকে দার্জিলিংয়ের অসাধারণ ভিউ পাওয়া যায়। ২০০৩ সালে রোপওয়ে দুর্ঘটনায় চারজন পর্যটকের মৃত্যুর পর থেকে পরিষেবা বন্ধ ছিল। আবার সব ঠিক করে ২০১২ সাল থেকে পরিষেবা চালু হয়েছে।

রক গার্ডেন – দার্জিলিং চৌরাস্তা থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে রক গার্ডেন অবস্থিত। ঘুম স্টেশনের পূর্বে ডানদিকে মোড় নিয়ে রক গার্ডেন যাওয়া যায়। এখানে সুন্দর ফুলের বাগানের পাশাপাশি বিভিন্ন উচ্চতায় পাহাড়ের গা ঘেঁষে বসার স্থান তৈরি হয়েছে। সঙ্গে আছে সুন্দর ঝর্না। প্রতিটা মোড় পেরিয়ে যখন পার্কের নিচের দিকে তাকানো হয়, তখন এক অসাধারণ ভিউ দেখতে পাওয়া যায়। বাচ্চাদের জন্য তো বটেই, বড়দের জন্যও খুব আকর্ষণীয় এই রক গার্ডেন। তবে রক্ষণাবেক্ষণের কিঞ্চিৎ অভাবে এখানে বেঞ্চিগুলো ভেঙ্গে গেছে। বসবার সময় তাই সাবধানে বসতে হবে।

গঙ্গা মায়া পার্ক – রক গার্ডেন থেকে ৩ কিলোমিটার নিচে গঙ্গা মায়া পার্ক অবস্থিত। জিএনএলএফ প্রতিবাদে পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তির নামে এই পার্কের নামকরণ। এখানে বোটিং ছাড়াও পর্যটকদের জন্য গোর্খা লোকনৃত্যের আয়োজন করা হয়। সবুজে ঘেরা এই পার্কটিতে বসে দার্জিলিং ঘোরার ক্লান্তি মিটিয়ে নিতে পারেন। ১৯৯৯ সালে পার্কটি তৈরি হয়েছিল। এখানে অনেক দোকানপাটের বিল্ডিং করা থাকলেও এখন সেগুলো বন্ধ। ভিতরে থাকবার জন্য সুন্দর একটি বিল্ডিং বানানো থাকলে সেটিরও ভগ্নদশা অবস্থা। সব মিলিয়ে পার্কটিতে এখন পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে।

দার্জিলিং চিড়িয়াখানা – এর পোশাকি নাম পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক। দার্জিলিং চৌরাস্তা থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থিত। ৬৭.৫ একর জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা এই পার্কে স্নো লেপার্ড, রেড পাণ্ডার মত বিরল প্রজাতির প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়। চিড়িয়াখানা ভালো করে ঘুরে দেখতে প্রায় তিন থেকে চার ঘন্টা সময় লাগবে। টিকিট কেটে এখানে প্রবেশ করতে হয়। এর মধ্যেই আছে বেঙ্গল ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম (Bengal Natural History museum)।
তাছাড়াও এর ভিতরেই আছে হিমালয়ান ইন্সটিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং এবং তাদের মিউজিয়াম। এটি ভারতের সেরা পর্বতারোহণ প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি হিসাবে স্বীকৃত। তাই পর্বতারোহণে আগ্রহী ট্যুরিস্টদের কাছে দার্জিলিং-এর অন্যতম একটি আকর্ষণ হল এটি, এখানে পাহাড়ে চড়ার জন্য তাঁরা প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।

হ্যাপি ভ্যালি টি এস্টেট – এটি দার্জিলিং শহরের দ্বিতীয় প্রাচীনতম চা বাগান। ৪৪০ একর জুড়ে রয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে বাগানটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। গাইড সহ এখানে ঘুরতে পারেন এবং অবশ্যই চা কিনতে পারেন। এখান থেকে চা বাগানের খুব সুন্দর ভিউ নেওয়া যায়, বিভিন্ন পোশাক পরে ছবি তুলতে পারবেন। পোশাকের চার্জ আলাদা। তবে এখানের সব জায়গায় ছবি তোলা যায় না। সেই ব্যাপারে অবশ্যই নজর দেবেন।
এছাড়াও এখানে অন্যান্য বেশ কিছু চা বাগান আছে যেখানে যেতে পারেন। কোন চা বাগান পর্যটকদের জন্য খোলা সেই ব্যাপারে গাইডের সাথে কথা বলে নেওয়া বেশি ভাল। তবে যেখানেই যান না কেন, চা পাতা তুলে দেখবার কোন প্রয়োজন নেই। দূর থেকেই দেখুন।
এ ছাড়াও দার্জিলিং-এ দেখার মধ্যে রয়েছে প্রচুর মনাস্ট্রি যেমন ডালি মনাস্ট্রি, ভুটিয়া বস্তি মনাস্ট্রি ইত্যাদি। এগুলো ছাড়া দার্জিলিং ভ্রমণ অসম্পূর্ণ। আর এতো গেল দার্জিলিং-এ কী কী দেখবেন । দার্জিলিং থেকে গাড়ি ভাড়া করে দূরের আরও বেশ কিছু জায়গা ঘোরা যায়। দার্জিলিং মল থেকে দাওয়াইপানি গ্রাম যাওয়া যায়। গোটা গ্রামটাই যেন কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিউ পয়েন্ট। দার্জিলিং থেকে মাত্র ১৯ কিলোমিটার দূরে লেপচাদের অদ্ভুত সুন্দর এক আদিবাসী গ্রাম। নিজের গাড়ি বা শেয়ারের জিপে মিরিক ঘুরে আসা যায়। মিরিক যাবার রাস্তায় পড়বে মহানন্দা অভয়ারণ্য। এছাড়া টয় ট্রেনে কার্শিয়াং আসতে পারেন। কার্শিয়াং এ দেখা যেতে পারে দোহিল ইকো পার্ক, গিদ্দাপাহাড় ভিউ পয়েন্ট, মকাইবাড়ি টি এস্টেট। এছাড়া দার্জিলিং থেকে চার ঘণ্টার দুরত্বে আছে লাভা, লোলেগাঁও এর মত জনপ্রিয় হিল স্টেশন।
সর্বশেষ সম্পাদনার সময়কাল – ২০২৩
তথ্যসূত্র
- নিজস্ব প্রতিনিধি
- Darjeeling, City Guide Map; Editors : Dr. R P Arya, Jitender Arya, Dr. Gayathri Arya, Anshuman Arya; Distributors: Prasad Book House,Siliguri
- https://www.darjeeling-tourism.com/
- https://darjeeling.gov.in/
- https://www.atlasobscura.com/
- https://traveltriangle.com/
দার্জিলিং দারুণ।