কলকাতার কাছাকাছি সপরিবারে একদিনের জন্য পিকনিকের আদর্শ স্থান ব্যারাকপুরের জওহরকুঞ্জ। পার্কের ভিতরের সবুজ মনোরম পরিবেশ এবং পাশে বয়ে চলা গঙ্গার হাওয়া এই দুইয়ে মিলে পিকনিকে এক অন্য মাত্রা দেবে।

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ব্যারাকপুরে হুগলী নদীর তীরে জওহরকুঞ্জ অবস্থিত। গান্ধী ঘাটের ঠিক পাশেই এই পার্ক অবস্থিত।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আরবান রিক্রিয়েশন ফরেস্ট্রি ডিভিশন দ্বারা পরিচালিত এই পার্কটি ছোট ও বড় গাছের সমাহারে সুসজ্জিত। ফুল দিয়ে সাজানো পার্কের ভেতরে শীতের সকালে হাঁটতে খুব সুন্দর লাগবে। তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা পার্কের পাঁচিলের পাশে হুগলী নদীর মনোরম দৃশ্য দেখে মন জুড়িয়ে যাবে। পার্কের ভেতরের রাস্তা এত সুন্দরভাবে কোথাও উঁচু আবার কোথাও নীচু করা হয়েছে, যাতে করে পার্কটির ভিতরে পাহাড়ি অঞ্চলের অনুভূতি তৈরী হয়। জায়গাটি পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য খুব সুন্দর একটি জায়গা।
শিয়ালদহ স্টেশন থেকে মেইন লাইনের ট্রেনে করে ব্যারাকপুর স্টেশনে আসতে হবে। স্টেশনের বাইরে টোটো স্ট্যান্ড রয়েছে। এই স্ট্যান্ড থেকে টোটো ভাড়া করে জওহরকুঞ্জ আসা যায়। নিজের গাড়ি নিয়ে এলে বিটি রোড ধরে সোজা এসে বাঁদিকে শঙ্কর মণ্ডল রোডে বেশ কিছুটা এলে পার্কে পৌঁছে যাবেন। এই পার্কের কাছেই রয়েছে সোনার অন্নপূর্ণা মন্দির। অন্নপূর্ণা মন্দির হয়ে এই পার্কে আসতে চাইলে বিটি রোড থেকে শঙ্কর মণ্ডল রোডের পূর্বেই বাঁদিকে পার্ক রোডে ঢুকতে হবে। সেখান থেকে কিছুটা এগিয়েই মন্দির এবং তার কিছুটা পরেই জওহরকুঞ্জ পার্ক।

সাধারণত পিকনিক করতেই লোকেরা এখানে আসে। তাছাড়া কলকাতা এবং তার কাছাকাছি জায়গা থেকে এখানে একদিনের জন্য সহজেই ঘুরতে আসা যায়। তাই এখানে রাত্রিবাসের কোনো প্রয়োজন নেই।
সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পার্কটি খোলা থাকে। এই পার্কে বয়স্ক এবং শিশুদের জন্য আলাদা প্রবেশমূল্য রয়েছে।এখানে বিভিন্ন চেনা এবং অচেনা গাছগুলো দেখতে দেখতেই সময় কেটে যায়। সুবিধার জন্য বহু গাছের গায়ে সেই গাছের নামের বোর্ড রয়েছে। এখানে ছোট একটি পুকুরও রয়েছে। তার চারপাশে সুন্দর সবুজের সমাহার। পার্কটিতে কয়েকটা ছাউনি দেওয়া বসার জায়গা রয়েছে, বিশেষ করে যেখানে নদীর মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। এখানে বসে হরেকরকমের পাখি দেখতে দেখতে মনটা ভরে উঠবে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পাখির আনাগোনা অনেকটাই কমেছে। বয়স্কদের প্রবেশমূল্য মাথাপিছু ৩৫ টাকা। ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ করলে আলাদা ভাড়া লাগবে। অনেকেই এই বসার জায়গাগুলোতে বসে পরিবেশ উপভোগ না করে নিজেদের নাম, মোবাইল নাম্বার লিখতে ব্যস্ত থাকে। এইসব করে পার্কের পরিবেশ এবং নিজের সম্মান নষ্ট করবেন না। বাগান ধরে কিছুটা এগোলেই বাচ্চাদের জন্য রয়েছে শিশু উদ্যান। শিশু উদ্যানের বিনোদনের সামগ্রীতে (যেমন দোলনা) বড়রা চাপলে ১০০ টাকা জরিমানা।

শিশু উদ্যান পেরোলেই পড়বে পিকনিক গার্ডেন। এখানে পিকনিক করার জন্য যারা আসে তাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন গাছ দিয়ে ঘেরা সবুজ মাঠ এবং সেই মাঠে বসার জন্য ছাউনি দেওয়া সিমেন্টের বসার জায়গা। পার্কের ভেতরে প্লাস্টিক বা অন্য কোন দ্রব্য ফেলে পার্কটি নোংরা করবেন না। মাথাপিছু যে টাকা ধার্য করা আছে, তা ছাড়াও পিকনিক আয়োজন করতে হলে আলাদা ৬০০ টাকা দিয়ে পিকনিকের অনুমতি নিতে হবে। পিকনিকের অনুমতি পেলেও মাইক বাজানো, মদ খাওয়া, ক্রিকেট জুয়া বা ভলিবল খেলা নিষিদ্ধ। তাই কোন পিকনিকে যদি মাইক বাজানো অপরিহার্য তাঁরা এই জায়গাটি উপেক্ষা করুন। পিকনিকের রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার, ওভেন আনতে হবে, কাঠ জ্বালিয়ে রান্না করা যাবে না। তাছাড়া এখানে থার্মোকল বা প্লাস্টিকের প্লেট বা গ্লাস একেবারে নিষিদ্ধ। খাবারের প্লেট হিসাবে কাগজের বা শালপাতার প্লেট বা গ্লাস নিতে ভুলবেন না।
এখানে পাশাপাশি বেশ কিছু ঘোরার জায়গা আছে। সোনার অন্নপূর্ণা মন্দির,গান্ধী ঘাট, গান্ধী স্মারক সংগ্রহালয়, মঙ্গল পান্ডে পার্ক, বার্থোলোমিউ ক্যাথেড্রাল, দেবদ্বার পার্ক, জগন্নাথ মন্দির ইত্যাদি দেখতে পারেন। সম্পূর্ণ ব্যারাকপুর ভ্রমণের তথ্য জানতে ক্লিক করুন এখানে।
সারা বছর ধরেই এখানে আসা যায়। শীতকালে পিকনিক করার জন্য আদর্শ সময়। অক্টোবর মাস থেকে মার্চ মাসের মধ্যে এলে মনোরম পরিবেশ থাকে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা অবধি পার্ক খোলা থাকে।
ট্রিপ টিপস
- কীভাবে যাবেন – শিয়ালদহ স্টেশন থেকে মেইন লাইনের ট্রেনে করে ব্যারাকপুর স্টেশনে আসতে হবে।তারপর টোটো করে জওহরকুঞ্জ আসা যায়। নিজের গাড়ি নিয়ে এলে বিটি রোড ধরে সোজা এসে বাঁদিকে শঙ্কর মণ্ডল রোডে বেশ কিছুটা এলে পার্কে পৌঁছে যাবেন।
- কোথায় থাকবেন – সাধারণত পিকনিক করতেই লোকেরা এখানে আসে। তাই এখানে রাত্রিবাসের কোনো প্রয়োজন নেই।
- কী দেখবেন – পার্কের সবুজ পরিবেশ এবং হুগলী নদীর মনোরম দৃশ্য। এছাড়া পাশাপাশি সোনার অন্নপূর্ণা মন্দির,গান্ধী ঘাট, গান্ধী স্মারক সংগ্রহালয়, মঙ্গল পান্ডে পার্ক, বার্থোলোমিউ ক্যাথেড্রাল, দেবদ্বার পার্ক, জগন্নাথ মন্দির ইত্যাদি দেখতে পারেন।
- কখন যাবেন – সারা বছরই এখানে আসা যায়।
- সতর্কতা –
- পার্কে প্রবেশ করতে হলে প্রবেশ মূল্য লাগে।
- পার্কের দেওয়ালে বা স্তম্ভে নিজের নাম, মোবাইল নাম্বার লিখবেন না।
- মাইক বাজানো, মদ খাওয়া, জুয়া, ক্রিকেট, ভলিবল ইত্যাদি খেলা নিষিদ্ধ।
- নোংরা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেললে আপনাকে জরিমানা দিতে হবে।
- শিশু উদ্যানের বিনোদনের সামগ্রীতে (যেমন দোলনা) বড়রা চাপলে ১০০ টাকা জরিমানা।
- পিকনিকের রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার, ওভেন আনতে হবে, কাঠ জ্বালিয়ে রান্না করা যাবে না।
- প্লাসিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ। কাগজ শালপাতার প্লেট ব্যবহার করতে পারেন।
- বিশেষ পরামর্শ –
- পিকনিকের ক্ষেত্রে একটা কথা মনে রাখতে হবে এখানে কিন্তু মাইক বাজানো, মদ খাওয়া, জুয়া, ক্রিকেট, ভলিবল ইত্যাদি খেলা নিষিদ্ধ। তাই কোন পিকনিকে যদি মাইক বাজানো অপরিহার্য হয় তাঁরা এই জায়গাটি উপেক্ষা করুন।
- এখানে থার্মোকল বা প্লাস্টিকের প্লেট বা গ্লাস একেবারে নিষিদ্ধ। খাবারের প্লেট হিসাবে কাগজের বা শালপাতার প্লেট বা গ্লাস নিতে ভুলবেন না।
তথ্যসূত্র
- নিজস্ব প্রতিনিধি
2 comments