পশ্চিমবঙ্গের পিকনিক স্পট

পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় পিকনিক স্পট

শীতকাল মানেই পিকনিকের সময়। তবে শীতকালই শুধু নয়, সারা বছর ধরেই পিকনিক করা যায়। বর্তমানে পিকনিক নামটিই বেশি জনপ্রিয় হলেও বাংলায় একে চড়ুইভাতি, বনভোজন ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে বাংলা নামের সাথে পিকনিকের বাঙালি মেজাজটাও কোথাও কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আগে সমস্ত পিকনিক মানেই বড় খোলা জায়গায় বা মাঠে পরিবার বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে একসঙ্গে রান্না বান্না করে খাওয়া দাওয়া করা বোঝাত। বর্তমানে অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় পিকনিক বলতে দল বেঁধে রিসোর্ট ভাড়া করে সেখানে খাওয়া দাওয়া করাকে বোঝায়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিকনিকের সংজ্ঞা বিভিন্ন হওয়ার ফলে কোন জায়গাকে পিকনিক স্পট বলা হবে আর কোন জায়গাকে বলা হবে না তাই নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। তাই সববাংলায় এর থেকে “পিকনিক স্পট” আখ্যা দেওয়ার জন্য কিছু শর্ত বানানো হয়েছে এবং যে জায়গাগুলো নিম্নলিখিত শর্তাবলী মানছে তাদের পিকনিক স্পটের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

  • যেখানে হোটেল বা রেস্টুরেন্টের মত যাতায়াতে বিধিনিষেধ থাকবে না এবং সেখানে একদল লোক একসাথে যেতে পারবে।
  • যে জায়গায় পিকনিক করা হবে সেটি সম্পূর্ণ বদ্ধ ঘরে বা হলে হবে না। খোলা জায়গা হতে হবে।
  • যেখানে লোকেরা নিজেরা রান্না করতে পারবে অথবা রান্নার লোক নিয়ে যেতে পারবে।
  • কোন বিশেষ বিধিনিষেধের জন্য রান্না না করতে পারলেও যেখানে বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে যেতে পারবে।
  • কোন বিশেষ কারণে রান্না না করতে পারলে বা বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে যেতে না পারলে যেখানের হোটেল বা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার পাওয়া যাবে ঠিকই, কিন্তু খাবারের মেনু যেন পিকনিক আয়োজনকারীরা ঠিক করে দিতে পারে বা অন্ততপক্ষে মতামত জানাতে পারে।
  • পিকনিকের দল নিজেদের পছন্দ মত গান-বাজনা করতে পারবে, নিজেদের মধ্যে ছোট খাটো খেলা আয়োজনসহ নিজেদের মত আনন্দে কাটাতে পারবে। তবে ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কিছু বিধিনিষেধ থাকতেও পারে।

আসুন এবার এক নজরে দেখে নিই পশ্চিমবঙ্গের পিকনিক স্পটগুলো। এই তালিকার মধ্যে যে জায়গাগুলো ইতিমধ্যে সববাংলায় সাইটে প্রকাশিত, সেগুলো লিঙ্ক করা রয়েছে। জায়গাটি নিয়ে বিস্তারিত জানতে লিঙ্কে ক্লিক করুন।

জয়ন্তীর অপরূপ দৃশ্য

জয়ন্তী – ডুয়ার্সের একটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট হল জয়ন্তী। কলকাতা, বর্ধমান বা দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জায়গা থেকে মানুষ সাধারণত ডুয়ার্স ভ্রমণের অঙ্গ হিসেবে এখানে ঘুরতে আসেন। তবে স্থানীয়দের কাছে জায়গাটি পিকনিক স্পট হিসাবে বেশি জনপ্রিয়। আলিপুরদুয়ার থেকে এর দুরত্ব মাত্র ৩০ কিলোমিটার। বছরের বেশিরভাগ সময়েই নদী শুকিয়ে পাথুরে মাঠ হয়ে থাকে। ছোট বড় নুড়ি পাথরে ভরা মাঠের ওপর দিয়ে হাঁটতে পারেন বা একসাথে বন্ধুবান্ধব বা পরিবার নিয়ে বসে আড্ডা দিতে পারেন। পিছনে পাহাড়ের নীলাভ কালো ছায়ার অপরূপ দৃশ্যে মন ভরে যায়। নদীর রূপ দেখা যায় বর্ষাকালে। তবে বর্ষাকালে এখানে না আসা ভাল। পিকনিকের জায়গা হলেও মনে রাখতে হবে এখানে কিন্তু রান্নার অনুমতি পাওয়া যায় না। জায়গাটি কোনভাবে নোংরা করবেন না।

সিকিয়াঝোরা
সিকিয়াঝোরার গভীরে। ছবি সববাংলায়

সিকিয়াঝোরা – বক্সা ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্পের ভিতরেই ছোট্ট তন্বী নদী সিকিয়াঝোরা এবং আশেপাশে ঘন জঙ্গল। অনেকে এই অঞ্চলকে ডুয়ার্সের অ্যামাজন বলে থাকেন। কলকাতা, বর্ধমান বা দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জায়গা থেকে মানুষ সাধারণত ডুয়ার্স ভ্রমণের অঙ্গ হিসেবে এখানে ঘুরতে আসেন। তবে স্থানীয়দের কাছে জায়গাটি পিকনিক স্পট হিসাবে বেশি জনপ্রিয়। আলিপুরদুয়ার থেকে এর দুরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। স্থানীয় গ্রামবাসীদের নিয়ে গঠিত একটি ইকো-ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কমিটি রয়েছে যারা এই সিকিয়াঝোরায় পিকনিক করতে আসা পর্যটকদের দেখাশোনা করেন। সিকিয়াঝোরা নদীতে নৌ-বিহার এক অনন্য অভিজ্ঞতা। সিকিয়াঝোরায় সম্প্রতি একটি ইকো-পার্কও গড়ে তোলা হয়েছে যেখানে শিশুদের উপযোগী দোলনা, ফোয়ারা ইত্যাদি রয়েছে। বর্ষাকাল ছাড়া বছরের যে কোনও সময় আসা যায় সিকিয়াঝোরা। সিকিয়াঝোরার জলে ভুল করেও নামবেন না, তাছাড়া গান চালানো বা চিৎকার করা, হুল্লোড় করা একেবারেই উচিত নয়। সিকিয়াঝোরা ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে

রসিক বিল পাখিরালয়– কোচবিহারের জনপ্রিয় পিকনিক স্পটগুলির মধ্যে রসিক বিল পাখিদের স্বর্গরাজ্য। পাখি দেখা ছাড়াও রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা। এর পাশেই রয়েছে পিকনিক স্পট যা বক্সিরহাট এবং সংলগ্ন অঞ্চলের পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এটি কোচবিহার থেকে মাত্র ৪০ কিলােমিটার দূরে এবং আলিপুরদুয়ার থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শীতকালে এখানে বিভিন্ন পাখির পরিযায়ী দেখা মেলে এবং পিকনিকের আদর্শ সময়ও শীতকাল। তাই পিকনিকের জন্য এখানে শীতকালে আসুন। খেয়াল রাখবেন এখানে মাইক বাজানো, মদ খাওয়া নিষিদ্ধ। তাছাড়া এখানে থার্মোকল বা প্লাস্টিকের প্লেট বা গ্লাসও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

কুলিক পাখিরালয় – উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ সদর শহর থেকে মাত্র ৪ কিমি দূরত্বে কুলিক পাখিরালয় অবস্থিত। বলা হয় এই কুলিক পাখিরালয় এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম পক্ষীনিবাস। বেশিরভাগ সময় পর্যটকদের ভিড় পাখিদের বিরক্ত করে, স্থানীয় পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয় পর্যটকদের জন্য। এই কারণে রায়গঞ্জের সামাজিক বনসৃজন দপ্তর কাছের ভাট্টাদিঘিতে একটি পিকনিক স্পট চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে যাতে পাখিরালয়ের কোনরকম ক্ষতি না হয়। কুলিক পাখিরালয় ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে

আদিনা ডিয়ার পার্ক – মালদা জেলার জনপ্রিয় পিকনিক স্পট হল আদিনা ডিয়ার পার্ক এলাকা যেখানে শীত মানেই পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ে। এখানে বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখি, হরিন, নীল গাই সমেত আরও অন্যান্য বন্য প্রাণীর দেখা মেলে। পিকনিক স্পটটি ডিয়ার পার্কের বাইরে। ডিয়ার পার্কে যেতে হলে টিকিট কেতে ঢুকতে হয়। মনে রাখতে হবে বৃহস্পতিবার ডিয়ার পার্ক বন্ধ থাকে।

মোতিঝিল পার্ক – মুর্শিদাবাদের জনপ্রিয় পিকনিক স্পট মোতিঝিল পার্ক। ভাগীরথী নদীর গতি পরিবর্তনে তৈরি হওয়া একটি অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ হল মোতিঝিল। নবাবী আমলে এই হ্রদে মুক্তোর চাষ করা হত বলে এর নাম মোতিঝিল। এখন মুক্তো চাষ হয় না, তবে শীতকালে পরিযায়ী পাখির দল সাঁতার দেয় জলের বুকে। সবুজে ঘেরা পার্কের ভেতরে বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় সিরাজের পরাজয়ের কাহিনী। পার্কে প্রবেশের জন্য মাথাপিছু টিকিট কিনতে হয়, সঙ্গে পিকনিকের জন্য আলাদা মূল্য লাগে। পিকনিকের জন্য পার্কের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

ভাল্কি মাচানের ভেতরে

ভাল্কি মাচান – বর্ধমানের একটি পরিচিত পিকনিক স্পট হল ভাল্কি মাচান। বলা হয় বর্ধমানের রাজা ভাল্কি মাচান জঙ্গলে মাচা তৈরি করে শিকারে আসতেন। পোড়া ইটের তৈরি সেই দুর্গ , পুরনো সেই জলাশয় এখনও আছে। এখানে মূলত বর্ধমানের স্থানীয় মানুষেরা পিকনিক করতে আসেন। পিকনিক করুন ভাল, কিন্তু পিকনিকের পর প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে জঙ্গল নোংরা করবেন না। বছরের যে কোনো সময় আসা যায়। তবে পিকনিকের জন্য শীতকালে আসাই ভালো। বর্ষাকালে এখানে না আসাই ভালো। ভাল্কি মাচান ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে

রসুলপুর মালঞ্চ নেচার পার্ক – বর্ধমানের রসুলপুরে অবস্থিত মালঞ্চ নেচার পার্ক স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। পার্কটি প্রায় ৪৫ একর এলাকা জুড়ে রয়েছে এবং বর্ধমান স্টেশন থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শীতকালে এখানে পিকনিকের জন্য স্থানীয় মানুষেরা ভিড় করেন।

কল্যাণী পিকনিক গার্ডেন – নদীয়া জেলায় অবস্থিত একটি চমৎকার পিকনিক স্পট হল কল্যাণী পিকনিক গার্ডেন। কলকাতা থেকে এর দুরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার এবং উত্তর ২৪ পরগণা থেকে এর দুরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। এই সমস্ত অঞ্চল থেকেই পর্যটকেরা এখানে পিকনিকের জন্য আসেন। পার্কটি প্রচুর গাছে ঘেরা এবং শিশুদের বিনোদনের জন্য স্লিপ, দোলনা ইত্যাদি রয়েছে। পার্কে প্রবেশ করতে বড়দের মাথাপিছু ৩০ টাকা এবং ৫ থেকে ১২ বয়সি বাচ্চাদের জন্য ১৫ টাকা ধার্য করা আছে। তা ছাড়াও পিকনিক আয়োজন করতে হলে আলাদা টাকা দিয়ে পিকনিকের অনুমতি নিতে হবে। ভেতরে কয়েকটি আলাদা পিকনিক স্পট আছে বা বলা ভাল পিকনিকের জন্য খোলা মাঠে বেশ কিছু শেড বানানো আছে। টালির শেডের ভাড়া ৮০০ টাকা, কিচেন বা প্যাগোডা শেডের ভাড়া ৪০০ টাকা এবং খোলা মাঠে পিকনিকের ভাড়া ১৫০ টাকা। এখানে রান্না বান্না করা যায়। তবে রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার, ওভেন আনতে হবে। কাঠ জ্বালিয়ে রান্না করা যাবে না। পিকনিকে মিউজিক চালানো যায় না বা অ্যালকোহল নিয়ে যাওয়া যায় না। ৫ টার মধ্যে পার্ক বন্ধ হয়ে যায় তাই পিকনিকও তার মধ্যে করে ফেলতে হবে। এখানে থার্মোকল বা প্লাস্টিকের প্লেট বা গ্লাস একেবারে নিষিদ্ধ। কাগজ শালপাতার প্লেট ব্যবহার করতে পারেন।

শুশুনিয়া পাহাড়ে ট্রেকিং

শুশুনিয়া পাহাড় – বাঁকুড়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পাহাড় হল শুশুনিয়া পাহাড়। পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে এখানের জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম শিলালিপিটি এই পাহাড়েই অবস্থিত। বাঁকুড়া শহর থেকে এর দুরত্ব মাত্র ২৪ কিলোমিটার। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকেরা থাকার জন্য এলেও বাঁকুড়া সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি পিকনিক স্পট হিসেবে বেশি জনপ্রিয়। তবে পিকনিক করতে গিয়ে পরিবেশ যাতে না নোংরা হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। পাহাড়ে উঠতে চাইলে খুব সাবধানে আপনাকে পাহাড়ে উঠতে হবে কারণ এখানে ছোট ছোট নুড়ির সংখ্যা খুব বেশি, যার ফলে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। গরমকালে এই অঞ্চলে অত্যধিক গরম থাকে, সেই সময়ে না যাওয়ায় ভালো। এমনিও পিকনিকের আদর্শ সময় শীতকাল। সেই সময়েই এখানে আসুন। শুশুনিয়া পাহাড় ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে

মুকুটমণিপুর – মুকুটমণিপুর বাঁকুড়ার অন্যতম প্রধান পিকনিক স্পট। ঝাড়খণ্ড সীমান্তের কাছে কংসাবতী ও কুমারী নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত মুকুটমণিপুরের দুরত্ব বাঁকুড়া শহর থেকে মাত্র ৫৫ কিলোমিটার এবং বিষ্ণুপুর থেকে ৮২ কিলোমিটার। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকেরা থাকার জন্য এলেও বাঁকুড়া, পুরুলিয়া বা সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি পিকনিক স্পট হিসেবে বেশি জনপ্রিয়। পিকনিক করতে গিয়ে জলাধারের জলে কিংবা মোহনায় বোটিং-এর সময় প্লাস্টিকের বর্জ্য ফেলা একেবারেই উচিত নয়। একটু ঘুরতে চাইলে মুকুটমণিপুর জলাধার, বোনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্ক, পরেশনাথের শিব মন্দির, কংসাবতী বাঁধ, মুসাফিরানা ভিউ পয়েন্ট ইত্যাদি জায়গা একে একে ঘুরে নেওয়া যায় সহজেই। সারা বছর ধরেই এখানে আসা যায় তবে শীতকালই পিকনিকের জন্য আদর্শ সময়। মুকুটমণিপুর ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে

খাদান ডুংরি পাহাড় – ঝাড়গ্রাম থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে একটি পিকনিক স্পট খাদানডুংরি পাহাড়। পাহাড়ের গায়েই যেন রামধনু এঁকে দিয়েছে কেউ – কোথাও লাল, কোথাও কালচে নীল, কোথাও আবার হলদে সবুজ। খাদানডুংরি মূলত স্থানীয় লোকেদের কাছে পিকনিকের জন্য বেশ ভাল। যারা বাইরে থেকে ঘুরতে আসেন তারা মূলত বেলপাহাড়ি ভ্রমণের অংশ হিসেবেই এখানে ঘুরতে আসেন। খাদান ডুংরি পাহাড় ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে

গনগনি – পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা শহরের অনতিদূরে অবস্থিত গনগনি এখানকার একটি পিকনিক স্পট। ভূপ্রাকৃতিক সাদৃশ্যের কারণে একে ‘বাংলার গ্র্যাণ্ড ক্যানিয়ন’ বলা হয়। স্থানীয় মানুষের কাছে এটি পিকনিক স্পট হিসেবে বেশি জনপ্রিয়। বর্ষাকালে এখানে না আসাই ভালো। জনশ্রুতি অনুসারে গনগনিতে শিলাবতী নদীর অপর পারের ভিখনগরেই নাকি অজ্ঞাতবাসের সময় পাণ্ডবেরা এসেছিলেন। শিলাবতী নদীর ধারে লাল মাটির এ যেন এক অন্য রূপ বাংলার। পাথুরে উঁচু-নীচু পথ, টিলা সব ধীরে ধীরে এসে মিশেছে নদীর পাড়ে। গরমকাল বা বর্ষাকাল এড়িয়ে চলুন। শীতকাল সবচেয়ে ভাল পিকনিকের জন্য। তবে পিকনিক করতে গিয়ে পরিবেশ যাতে না নোংরা হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। গনগনি ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে

ঝাউবন
দীঘার ঝাউবন। ছবি সববাংলায়

নিউ দীঘা – কথাতেই আছে, বাঙালির ঘোরার তিনটে জায়গা হল দীপুদা, অর্থাৎ দীঘা, পুরী আর দার্জিলিং। দীঘা এমন একটি সমুদ্রসৈকত, যা বাঙালির কাছে কখনও পুরনো হয়না। গোটা পশ্চিমবঙ্গ এমনকি ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকেও সমুদ্রের আস্বাদ নিতে মানুষ ছুটে আসে দিঘা। কাঁথি থেকে এর দুরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। ওয়ারেন হেস্টিংস তাঁর একটি চিঠিতে এই জায়গাকে “প্রাচ্যের ব্রাইটন” বলে উল্লেখ করেছেন। দীঘার দুটো ভাগ, ওল্ড দীঘা এবং নিউ দীঘা। পিকনিকের জন্য লোকে নিউ দীঘাতে আসেন। কয়েক কিলোমিটার লম্বা নিউ দীঘার সমুদ্রসৈকতের এক পাশে যেমন গভীর সমুদ্র, তেমন অন্যপাশে ঝাউ গাছের অগভীর জঙ্গল। স্থানীয় মানুষেরা এই ঝাউবনেই বাস বা গাড়ি নিয়ে পিকনিক করতে আসেন। দীঘায় কেনাকাটি করার জন্য প্রচুর দোকান। পিকনিকের মেনুতে অবশ্যই এখানের সামুদ্রিক মাছ রাখবেন। পাশাপাশি দীঘা থেকে কাজুবাদাম, হাতে সেলাই করা মাদুর, হায়দ্রাবাদী মুক্তোর গহনা, ঝিনুকের মালা ও গহনা, শুঁটকি মাছ, শঙ্খ, কাপড়ের ব্যাগ, কাঠের পেন, ঝিনুকের পেন স্ট্যান্ড কিনতে পারেন। কিন্তু পিকনিক করতে এসে ঝাউবনের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। দীঘা ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে

গাদিয়াড়া – গাদিয়াড়া হাওড়া জেলার শ্যামপুর থানার অন্তর্গত একটি ভাল পিকনিক স্পট। গাদিয়াড়ার নিসর্গ সৌন্দর্যের অন্যতম প্রধান উপাদান তিন নদীর মিলনস্থল আর তার পাড়ের নিবিড় গাছের সারির ছায়াঘেরা প্রশান্তি। সেই সব গাছের নীচে আলাদা করে ভ্রমণার্থীদের জন্য বসার জায়গাও করা হয়েছে। কলকাতা থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৮৫ কিলোমিটার। নদীর পাড়ে মানুষ পিকনিক করতে জড়ো হয়। পরিবহন দপ্তরের উদ্যোগে এখানে একটি ভেসেল চালু হয়েছে যাতে করে নদীপথে ঘুরে বেড়ানো যায়। ভেসেলে করে নদীপথে ভ্রমণের আনন্দ নিতে ভুলবেন না। তবে জলে নামার চেষ্টা করবেন না কারণ এখানে স্রোত প্রবল। পিকনিকে ছোট বাচ্চা সঙ্গে থাকলে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করুন যাতে নদীর ধারে সে না চলে আসে। গাদিয়াড়া ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে

কলকাতার পিকনিক স্পট

সারা কলকাতা জুড়ে অজস্র পিকনিক স্পট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এখানে তাদের উল্লেখ করা হল।

আলিপুর চিড়িয়াখানা – কলকাতা এবং আশেপাশের অঞ্চলের মানুষের কাছে সপরিবারে পিকনিকের অন্যতম জনপ্রিয় জায়গা এটা। বিশেষ করে ছোটদের মধ্যে জায়গাটি বেশি জনপ্রিয়।

ইকো পার্ক – উত্তর ২৪ পরগণার নিউটাউনে অবস্থিত ইকো পার্ক কলকাতা এবং আশেপাশের অঞ্চলের মানুষের কাছে পিকনিক স্পট হিসাবে নতুন সংযোজন। এটি ভারতের সবচেয়ে বড় পার্ক।

সায়েন্স সিটি – কলকাতায় অবস্থিত সায়েন্স সিটি ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে বৃহত্তম বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিনোদন পার্ক যা কলকাতার তপসিয়া অঞ্চলে অবস্থিত।

প্রিন্সেপ ঘাট – কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় একটি দর্শনীয় স্থান এটি।  বিদ্যাসাগর সেতুর ঠিক তলায় হুগলি নদীর তীরে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের ওয়াটার গেট ও সেন্ট জর্জেস গেটের মাঝে এই ঘাটটি অবস্থিত।

এগুলো ছাড়াও কলকাতার বুকে দশটিরও বেশি পিকনিক স্পট রয়েছে। সেই সমস্ত স্পটের তালিকা সমেত তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে

জওহরকুঞ্জ
জওহরকুঞ্জ পার্কের দৃশ্য। ছবি সববাংলায়

জওহরকুঞ্জ পার্ক – কলকাতা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ব্যারাকপুরের জওহরকুঞ্জ সপরিবারে পিকনিক করতে যাবার আদর্শ স্থান। পার্কের ভিতরের সবুজ মনোরম পরিবেশ এবং পাশে বয়ে চলা গঙ্গার হাওয়া এই দুইয়ে মিলে পিকনিক জমে উঠবে। শিশুদের জন্য আলাদা পার্ক রয়েছে। এখানে পিকনিক করার জন্য যারা আসে তাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন গাছ দিয়ে ঘেরা সবুজ মাঠ এবং সেই মাঠে বসার জন্য শেড রয়েছে। পার্কের ভেতরে প্লাস্টিক বা অন্য কোন দ্রব্য ফেলে পার্কটি নোংরা করবেন না। পার্কে প্রবেশ মাথাপিছু কিছু টাকা ধার্য করা আছে, তা ছাড়াও পিকনিক আয়োজন করতে হলে আলাদা টাকা দিয়ে পিকনিকের অনুমতি নিতে হবে। মাইক বাজানো, মদ খাওয়া, ক্রিকেট জুয়া বা ভলিবল খেলা নিষিদ্ধ। তাছাড়া এখানে থার্মোকল বা প্লাস্টিকের প্লেট বা গ্লাস একেবারে নিষিদ্ধ। জওহরকুঞ্জ পার্ক ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে

সংহতি পার্ক – উত্তর ২৪ পরগণা জেলার একটি পিকনিক স্পট হল সংহতি পার্ক। অশোকনগর, হাবরা, কল্যাণগড় এবং এই সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে এই পার্ক একটি পরিচিত নাম। এটি মূলত একটি বিনোদন পার্ক যেখানে বোটিং, লেক, মিকি মাউস, টয় ট্রেন, মিউজিয়াম, রোপ ওয়ের মত বিভিন্ন বিনোদনের সামগ্রী রয়েছে।। পার্কের নির্দিষ্ট প্রবেশমূল্য রয়েছে এবং পিকনিক করতে চাইলে তার জন্য অতিরিক্ত টাকা লাগবে।

টাকি
ইছামতীর পাড়ে ছবি সববাংলায়

টাকি – উত্তর ২৪ পরগণা জেলার একটি বিখ্যাত পিকনিক স্পট টাকি। শীতকালে কলকাতা, হাওড়া, উত্তর চব্বিশ পরগণা এবং সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষের প্রিয় পিকনিকের জায়গাগুলোর মধ্যে একটি হল টাকি। তবে শুধু শীতকালেই না, সারা বছর ধরেই  এখানে পর্যটকেরা আসে, সারা বছর জুড়েই চলে পিকনিক। বিভিন্ন স্কুল থেকেও একদিনের ভ্রমণের জন্য নিয়ে আসা হয় টাকি। কলকাতা থেকে মাত্র ২ ঘণ্টার দূরত্বে ইছামতী নদীর পাড়ে পিকনিক করতে আসতে পারেন। এখানে খুব কাছ থেকে বাংলাদেশকে দেখা যায় কারণ ইছামতীর অন্য পাড়েই বাংলাদেশ। টাকি শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, তবে টাকির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বা দর্শনীয় স্থান হল গোলপাতার জঙ্গল বা মিনি সুন্দরবন। গোলপাতার জঙ্গল বা মিনি সুন্দরবনের দায়িত্বে স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স। জঙ্গলে ঢোকার সময় তাদের কাছে সরকারী পরিচয়পত্র জমা দিয়ে ঢুকতে হয়। আবার বেরনোর সময় সেটি ফেরত পাওয়া যায়। তাই টাকি ভ্রমণকালে সঙ্গে সরকারী পরিচয়পত্র রাখা আবশ্যিক। টাকি ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে

পিয়ালী দ্বীপ – উত্তর ২৪ পরগণা জেলার একটি পিকনিক স্পট হল পিয়ালী দ্বীপ। পিয়ালি দ্বীপকে বলা হয় সুন্দরবনের প্রবেশপথ। কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলি থেকে শীতকালে পর্যটকেরা এখানে পিকনিকের জন্য আসেন। সেই সময়ে এখানে প্রচুর পরিযায়ী পাখি দেখতে পাওয়া যায়। পিয়ালী দ্বীপ ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে

ডায়মন্ড হারবার – দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার একটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট হল ডায়মন্ড হারবার। কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলি থেকে সারা বছর ধরেই পর্যটকেরা এখানে পিকনিকের জন্য আসেন। কলকাতা থেকে এর দুরত্ব মাত্র ৫০ কিলোমিটার। গঙ্গার তীরে এই নির্জন জায়গায় চিংরিখালি দুর্গের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। তার পাশেই গড়ে উঠেছে পিকনিকের জায়গা। প্রবেশমূল্য মাত্র ১০ টাকা। গঙ্গার তীরে মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে এখানে বন্ধুবান্ধব পরিবারের সাথে মজা করতে পারেন। তবে জায়গাটি নোংরা করবেন না।

বকখালি পিকনিকের মাঠ। ছবি সববাংলায়

বকখালি – দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার অন্তগর্ত বকখালি দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের একটি সমুদ্র সৈকত। সুন্দরবনের কাছাকাছি অবস্থিত এই সৈকতটি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানের বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত, সৈকতের পরিষ্কার সাদা বালি, সৈকতের পাড়ে ম্যানগ্রোভ এর শোভা, লাল কাঁকড়ার দল সব মিলিয়ে অতুলনীয়। কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলি থেকে সারা বছর ধরেই পর্যটকেরা এখানে থাকার পাশাপাশি পিকনিক করতেও আসেন। বকখালি সৈকতের ওপরে পার্কিং এর পাশেই পিকনিকের জন্য একটি মাঠ রয়েছে। ওই মাঠে রান্না করে খাওয়া বা আলাদাভাবে পিকনিকের খাওয়া-দাওয়া করতে পারেন। পিকনিকের জন্য মাঠ ভাড়া দিতে হয় ৫০ টাকা, যদি রান্না করেন তার জন্য ভাড়া দিতে হয় ৫০ টাকা এবং গাড়ি পার্কিং এর ভাড়া ছোট গাড়ির জন্য ৬০ টাকা ও বড় গাড়ির জন্য ১০০ টাকা। মাঠের বাইরে একটিমাত্রই শৌচাগার আছে এবং সেটি ব্যবহার করতে গেলে অনেক সময়েই লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। পিকনিকের পর সেখানে প্লাস্টিকের থালা, গ্লাস, চায়ের কাপ, মদের বাক্স ইত্যাদি ফেলে যাবেন না। বকখালি ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন এখানে


সর্বশেষ সম্পাদনার সময়কাল – ২০২৩

6 comments

  1. পিয়ালী দ্বীপ দক্ষিণ ২৪ পরগণায় অবস্থিত। আপনারা ভুল ইনফরমেশন দিয়েছেন। ইনফরমেশনটা এডিট করে দেবেন।

আপনার মতামত জানান