বিপিনচন্দ্র পাল

বিপিনচন্দ্র পাল

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে যাঁরা বীর-বিক্রমে এবং নিজস্ব মেধার সাহায্যে প্রায় সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব বিপিনচন্দ্র পাল (Bipin Chandra Pal)। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ত্রয়ী ‘লাল বাল পাল’-এর ‘পাল’ হলেন বিপিনচন্দ্র পাল। গান্ধীজির পন্থায় নিজের অবিশ্বাস খুব স্পষ্টভাবেই প্রকাশ করেছিলেন তিনি এবং চরমপন্থী বৈপ্লবিক আন্দোলন সংগঠিত করে তুলেছিলেন বালগঙ্গাধর তিলকদের সঙ্গে। গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেননি তিনি। অনেক পণ্ডিত তাঁকে ‘ভারতীয় বিপ্লবী চিন্তাধারার জনক’ বলে থাকেন। বৈষম্যমূলক অস্ত্র আইন বাতিলের জন্য জোরালো আবেদন করেছিলেন তিনি। একজন অসামান্য বক্তা হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল চতুর্দিকে। বিদেশেও তিনি ভারতবর্ষের স্বরাজের ওপর জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েছিলেন। একজন দক্ষ সাংবাদিক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন বিপিনচন্দ্র পাল। ‘নিউ ইন্ডিয়া’, ‘বন্দেমাতরম’-এর মতো সংবাদপত্রগুলির মাধ্যমে ইংরেজ বিরোধিতা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি নিরন্তর। ব্রিটিশের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ফল যে বঙ্গভঙ্গ, তার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। এমনকি বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে গণ সমর্থন তৈরির জন্য ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করেছিলেন বিপিনচন্দ্র পাল। জাতীয়তাবাদের ধারায় জাতীয় শিক্ষা যে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ তা অনুভব করতে পেরেছিলেন তিনি। ব্রাহ্ম সমাজের সদস্য হিসেবে জাতিভেদ ও বর্ণভেদ প্রথাকে ঘৃণা করতেন তিনি।

১৮৫৮ সালের ৭ নভেম্বর ব্রিটিশ শাসনাধীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত শ্রীহট্ট জেলার হবিগঞ্জের পোয়েল গ্রামে এক হিন্দু বাঙালি বৈষ্ণব পরিবারে বিপিনচন্দ্র পালের জন্ম হয়। তাঁর বাবা রামচন্দ্র পাল (Ramchandra Pal) ফার্সি ভাষার একজন পণ্ডিত ছিলেন এবং ছোট একটি জমির মালিকানা ছিল তাঁর। বিপিনচন্দ্রের মা নারায়ণী দেবী (Narayani Devi) শাটিয়াজুরী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। রামচন্দ্রের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ছিলেন নারায়ণী। রামচন্দ্র ঢাকার সদর-আলা বা অধস্তন বিচারকের আদালতে বেঞ্চ কেরানির চাকরি করতেন। বিপিনচন্দ্র তাঁর বাবা-মায়ের একমাত্র পুত্র ছিলেন, ফলে অভিভাবকের আদর স্নেহ এবং মনোযোগ সবটা তাঁকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হত। একগুঁয়ে, জেদি এবং উগ্র স্বভাব হয়ত ছোট থেকেই গড়ে উঠেছিল বিপিনের মধ্যে। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই বর্ণপ্রথায় বিশ্বাস হারিয়েছিলেন তিনি।

প্রথমে শ্রীহট্টেরই একজন মৌলভীর কাছে প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ করেন বিপিনচন্দ্র পাল। প্রথম বছরগুলিতে বাংলা ও ফার্সি শিখেছিলেন তিনি। পরে ইংরেজি স্কুলেও ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। শ্রীহট্ট তথা সিলেটের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৮এরপর ৭৪ সালে সেই বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হন তিনি। উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য বিপিনচন্দ্র পাল এরপর চলে আসেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু সেসময়ে প্রচলিত শিক্ষা সংক্রান্ত আইনের প্রতি প্রচণ্ড অসন্তোষবশত মাঝপথে, স্নাতক হওয়ার আগেই তিনি প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তী বছরগুলিতে স্বশিক্ষিত হন বিপিনচন্দ্র পাল। তাঁর সাহিত্যিক দক্ষতা ছিল অনবদ্য। সেসময় তিনি উপনিষদ এবং শ্রীমদ্ভাগবত গীতা ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন কেশবচন্দ্র সেন, শিবনাথ শাস্ত্রীদের মতো মানুষের দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন বিপিনচন্দ্র পাল এবং ফলস্বরূপ ১৮৭৭ সালে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে তাঁর বাবা তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র করেছিলেন। ব্রাহ্মধর্মে যোগদান করে গোঁড়া ঐতিহ্য এবং সামাজিক কুফলের বিরোধিতা করা শুরু করেন তিনি। সেই অল্প বয়স থেকেই জাতপাতের ভিত্তিতে গড়ে তোলা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন বিপিনচন্দ্র পাল। ১৮৭৯ সালে তিনি কটকের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় তিনি সেই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন। এরপর শ্রীহট্ট, কলকাতা, ব্যাঙ্গালোর ইত্যাদি জায়গায় শিক্ষকতা করে বেরিয়েছেন তিনি। বিপিনচন্দ্র পাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত চার্চ মিশন সোসাইটি কলেজে (বর্তমানে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজ) অধ্যয়ন করেছিলেন যেমন, তেমনি পরবর্তীকালে এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনাও করেছেন। ১৮৯০-৯১ সালে তিনি কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক এবং সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে কাজ করবার সময়েই সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, বি.কে গোস্বামীদের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। ব্রাহ্মসমাজে যোগদানের পর ১৮৮১ সালের ডিসেম্বরে বোম্বাইতে নৃত্যকালী দেবী (Nrityakali Devi) নামে এক বাল্য-বিধবা রমণীকে ব্রাহ্মমতে বিবাহ করেন বিপিনচন্দ্র পাল। ফলে পরিবারের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয় তাঁকে। যদিও এই প্রথম স্ত্রী-র মৃত্যুর পর ১৮৯১ সাল নাগাদ তিনি আরেক ব্রাহ্মণ বিধবা বিরাজমোহিনী দেবীকে (Birajmohini Devi) বিবাহ করেন। বিপিনচন্দ্রের পুত্র নিরঞ্জন পাল ছিলেন বিখ্যাত বম্বে টকিজের প্রতিষ্ঠাতা।

সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর অনুপ্রেরণাতেই সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন বিপিনচন্দ্র। ১৮৮৬ সালে তিনি জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন এবং ১৮৮৭ সালে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের তৃতীয় বার্ষিক অধিবেশনে অস্ত্র আইন হ্রাস করার জন্য জোরালো আবেদন করেন বিপিনচন্দ্র। এই আইনবলে আবাদি জমির কর্মকর্তাদের দ্বারা আসামের চা-শ্রমিকরা খুবই অত্যাচারিত হত। জাতীয় কংগ্রেসের সদস্যপদ সর্বভারতীয় স্তরে জাতীয় নেতা হিসেবে তাঁর উত্থানের মঞ্চ তৈরি করে দেয়। কংগ্রেসের নরমপন্থীদের সঙ্গে যুক্ত হলেও খুব শীঘ্রই লালা লাজপত রাই, বাল গঙ্গাধর তিলক এবং অরবিন্দ ঘোষদের চরমপন্থী বিপ্লবের ধারণাকে সমর্থন করে সেই পথেই হাঁটতে থাকেন তিনি। বিপিনচন্দ্র বিশ্বাস করতেন, প্রার্থনা-আবেদনের সাহায্যে স্বরাজলাভ সম্ভব নয়, বদলে ব্রিটিশ শাসনকে আক্রমণ করা নিতান্ত প্রয়োজন। ঐতিহাসিক ত্রয়ী লাল-বাল-পালের একজন হলেন বিপিনচন্দ্র এবং বাকি দুজন লালা লাজপত রাই ও বালগঙ্গাধর তিলক। এই ত্রয়ী বৈপ্লবিক আবেগকে উজ্জীবিত করেন এবং বিভিন্ন বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে থাকেন। অরবিন্দ ঘোষের সঙ্গে মিলিতভাবে একটি জাতীয়তাবাদের প্রচার করেছিলেন বিপিনচন্দ্র যার আদর্শ ছিল সম্পূর্ণ স্বরাজ, স্বদেশি, বিদেশি পণ্য বয়কট এবং জাতীয় শিক্ষা। তাঁরা বিশ্বাস করতেন এগুলি কার্যকর করতে পারলে দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব হ্রাস পেতে পারে। এভাবেই জাতীয় আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। এই যে, স্বরাজ, বয়কট ইত্যাদি শব্দগুলি গান্ধীজীর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়, আসলে এগুলির উৎস চরমপন্থী মনোভাবাপন্ন উগ্র জাতীয়তাবাদ থেকে।

১৮৯৮ সালে বিপিনচন্দ্র তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনার জন্য ইংল্যান্ডে চলে যান এবং এক বছর অক্সফোর্ডে কাটান। এসময় ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও আমেরিকায় জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে সুবক্তা হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। এক বছরের ব্যবধানে ভারতবর্ষে ফিরে এসে ‘স্বরাজ’-এর ধারণা ভারতীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ১৯০২ সালে ‘নিউ ইন্ডিয়া’ নামক একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন তিনি। যদিও এর আগে ১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘বেঙ্গলি পাবলিক ওপিনিয়ন’-এ সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি এবং ১৮৮৬ সালে ‘পরিদর্শক’ নামের একটি কাগজ সম্পাদনা ও প্রকাশ করেছিলেন বিপিনচন্দ্র। এছাড়াও খুব অল্প সময়ের জন্য ‘লাহোর ট্রিবিউন’-এও সম্পাদনার কাজ করেছিলেন তিনি। সাংবাদিকতা এবং সম্পাদনার পেশাকে তিনি ব্যবহার করতেন হাতিয়ারের মতোই। জাতীয় ভাবধারা, স্বরাজের ধারণা, উগ্র ইংরেজ বিরোধিতা ইত্যাদি প্রচারের জন্যই সংবাদপত্রকে অস্ত্রের মতো ব্যবহার করেছিলেন তিনি। জাতীয়তাবাদ, মানবতা, সামাজিক সচেতনতা এবং পূর্ণ স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সর্বদা ‘নিউ ইন্ডিয়া’ কাগজে বিপিনচন্দ্র পাল নিবন্ধ, বক্তৃতাধর্মী লেখা বা অন্যান্য রচনা প্রকাশ করতেন। ১৯০৪ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বম্বে অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছিলেন বিপিনচন্দ্র পাল। এরপর ঘটে যায় ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ সরকারের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের ফলে বাঙালির ও বাংলার বিভাজন যা ‘বঙ্গভঙ্গ’ নামে পরিচিত। সেবছর জাতীয় সিনেটে যোগদান করে বিপিনচন্দ্র এইসময় ১৯০৬ সালে ৬ আগস্ট ‘বন্দেমাতরম’ নামে একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার সূত্রপাত করেন এবং এর প্রধান সম্পাদক হন। এই কাগজের শিরোনামায় লেখা থাকত, ‘ইন্ডিয়া ফর ইন্ডিয়ানস’। এই দৈনিকের মাধ্যমে দিকে দিকে বঙ্গভঙ্গ বিরোধিতার ডাক দেন তিনি। এমনকি বঙ্গভঙ্গ বিরোধিতার পক্ষে গণসমর্থন সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বাংলা, আসাম, উত্তরপ্রদেশ এবং মাদ্রাজের বিভিন্ন স্থানে সফর ও প্রচারের আয়োজন করেছিলেন বিপিনচন্দ্র। এমনকি ইংরেজদের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ম্যাঞ্চেস্টারের মিলগুলিতে তৈরি বিদেশি কাপড় পোড়ানো, ব্রিটিশ মালিকানাধীন ব্যবসা ও শিল্পকেন্দ্রগুলিতে লকআউট এবং ধর্মঘটের মতো চরমপন্থী পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন তিনি। এই বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন থেকেই একপ্রকার বলা যায়, প্রকৃত স্বদেশি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল। তাঁকে স্বদেশি আন্দোলনের অন্যতম স্থপতিও বলা যেতে পারে।

বোমা মামলায় গ্রেফতার হওয়া অরবিন্দ ঘোষের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করলে বিপিনচন্দ্রকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ১৯০৭ সালে মাদ্রাজের সমুদ্র উপকূলে স্বরাজের দাবি উত্থাপন করে যে বক্তৃতা দেন তিনি, তা দেশবাসীর মনে স্বদেশচেতনাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল বলা চলে। ব্রিটিশ বিরোধী লেখালেখির জন্য ইংরেজ সরকার তাঁকে নির্বাসন দেওয়ার কথা চিন্তা করেছিল। কিন্তু লোকমান্য তিলকের গ্রেপ্তারির পর নিজেই তিনি ১৯০৮ সালে দ্বিতীয়বার ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখানে বিপ্লবী ধারা প্রবাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ইন্ডিয়া হাউসে যোগ দেন তিনি এবং ‘স্বরাজ’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন। এই কাগজে ‘বাঙলাদেশে বোমার নিদান’ নামক প্রবন্ধ রচনার কারণে কারাদণ্ড ভোগ করতে হয় তাঁকে। ১৯০৯ সালে বিপ্লবী মদনলাল ধিংরা কার্জন ওয়াইলিকে হত্যা করলে স্বরাজের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় এবং লন্ডনে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। ১৯১২ সালে ইংরেজি মাসিক ‘হিন্দু রিভিউ’ প্রতিষ্ঠা করেন বিপিনচন্দ্র। এছাড়াও পরবর্তীকালে ‘ইনডিপেনডেন্ট’, ‘উইকলি ডেমোক্র্যাট’ ইত্যাদি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি দক্ষ হাতে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বিপিনচন্দ্র পাল চরমপন্থী সংগ্রামের পথ বর্জন করে অ্যানি বেসান্তের ‘হোমরুল আন্দোলন’কে সমর্থন করেছিলেন। ১৯১৯ সালে তিলকের নেতৃত্বে হোমরুল লীগের ডেপুটেশনের সদস্য হিসেবে তৃতীয়বারের মতো ইংল্যান্ডে যান তিনি। ১৯১৯ সাল নাগাদ জাতীয় কংগ্রেসে বিপিনচন্দ্র ‘মধ্যপন্থী’ হিসেবে বিবেচিত হতেন। ১৯২০ সালে গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন করতে পারেননি তিনি। তাঁর মতে এই আন্দোলন যুক্তির বদলে জাদুর ওপরে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। তাছাড়া অসহযোগের সঙ্গে খিলাফত আন্দোলনের সংযুক্তিকরণেরও সমালোচনা করেছিলেন বিপিনচন্দ্র। ১৯২১ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে তিনি তাঁর সভাপতির ভাষণে গান্ধীর ধারণার তীব্র সমালোচনা করেন।

১৯২৫ সাল নাগাদ রাজনীতি থেকে অবসর নেন বিপিনচন্দ্র পাল। জীবনের শেষ ছয় বছর জাতীয় কংগ্রেসের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থেকেছেন তিনি। কিন্তু বিভিন্ন সাময়িক পত্র-পত্রিকায় নিজের লেখালেখির চর্চা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি বরাবর। তাঁর লেখায় তিনি যেমন শ্রমিকদের জন্য মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন, নারী-পুরুষের সমতার কথা বলেছেন, তেমনি নারীশিক্ষাসহ আরও প্রয়োজনীয় কয়েকটি বিষয়ের পক্ষেও সওয়াল করেছেন। আজীবন এমন কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেছিলেন বিপিনচন্দ্র পাল যার ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। মহারানি ভিক্টোরিয়ার একটি জীবনী রচনা করেছিলেন তিনি। এছাড়াও তাঁর লেখা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি গ্রন্থ হল ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনালিজম’, ‘ন্যাশনালিটি অ্যান্ড এম্পায়ার’, ‘স্বরাজ অ্যান্ড দ্য প্রেজেন্ট সিচুয়েশন’, ‘দ্য সোল অফ ইন্ডিয়া’, ‘স্টাডিজ অফ হিন্দুইজম’, ‘দ্য বেসিস অফ স্যোশাল রিফর্ম’, ‘জেলের খাতা’ ইত্যাদি।

১৯৩২ সালের ২০ মে কলকাতায় এই মহান বিপ্লবী বিপিনচন্দ্র পালের মৃত্যু হয়।

One comment

আপনার মতামত জানান