পুরী যেমন হিন্দুদের চারধামের একটি ধাম, তেমনই বাঙালির তিনধামেরও প্রধান ধাম। কথাতেই আছে যে বাঙালির প্রিয় ঘোরার জায়গা হল দী-পু-দা অর্থাৎ দীঘা, পুরী আর দার্জিলিং। পুরী ভ্রমণে তিনটে জিনিস সবসময় থাকবেই, সমুদ্র, জগন্নাথ মন্দির এবং পুরীর খাজা। জগন্নাথ মন্দির এখানকার প্রধান তীর্থক্ষেত্র হলেও এখানে হিন্দুদের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্দির রয়েছে। যে বাড়িটি থেকে শেষবার বেরিয়ে চৈতন্যদেব আর ফিরে আসেননি, সেটিও জগন্নাথ মন্দিরের কাছেই এবং পুরীর আরেকটি দর্শনীয় স্থান।
জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ছাড়াও উড়িষ্যা রাজ্যের পুরী জেলার সদর দফতর হল পুরী শহর। বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত এই শহরটি উড়িষ্যার রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে ৬০ কিমি দূরে অবস্থিত।
পূর্বে এই জায়গাটির নাম ছিল পুরুষোত্তম পুরী। সময়ের সাথে সেই নাম পরিবর্তিত হয়ে পুরী হয়ে যায়। বিভিন্ন পুরাণে পুরী’কে পুরুষোত্তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে পুরুষোত্তম অর্থে জগন্নাথকে বোঝানো হয়েছে। এছাড়াও পুরী শ্রীক্ষেত্র নামেও পরিচিত। শ্রী শব্দের অর্থ শ্রীদেবী বা দেবী লক্ষ্মী। পুরীর জগন্নাথ মন্দির উড়িষ্যা তথা ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। গঙ্গ বংশীয় রাজা চৌধগঙ্গা দেবের আমলে এই মন্দিরের কাজ শুরু হয়। তারপরে রাজা অনঙ্গভীম দেব মন্দিরের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন। পরবর্তীকালে অন্য গঙ্গ বংশীয় রাজা এবং তারও পরে গজপতি বংশীয় রাজাদের আমলে এই মন্দির পরিবর্ধন করা হয়। প্রাচীনকালে ইউরোপীয় নাবিকদের কাছে মন্দিরটি সাদা প্যাগোডা নামে পরিচিত ছিল। শ্রী চৈতন্যদেব তাঁর জীবনের কুড়ি বছরেরও বেশি সময় পুরীতে কাটিয়েছেন। উড়িষ্যার তৎকালীন রাজা প্রতাপ রুদ্রদেব তাঁকে কৃষ্ণের অবতার বলে মনে করতেন। ১৫৩৩ সালে আষাঢ় মাসে তিনি সেই যে ঢুকলেন পুরীর মন্দিরে, তারপর আর কেউ তাঁর দেখা পাননি। আজও তাঁর মৃত্যু রহস্যই রয়ে গেছে।
জগন্নাথ মন্দির এবং সমুদ্র সৈকত এই নিয়েই পুরী। পুরীতে বেশ কয়েকটি সমুদ্রসৈকত আছে। তাদের মধ্যে সবথেকে বিখ্যাত অবশ্যই স্বর্গদ্বার সৈকত। জগন্নাথ মন্দির ছাড়াও আরো প্রচুর মন্দির রয়েছে। তাছাড়াও রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান। আর যেটা ছাড়া পুরী অসম্পূর্ণ তা হল পুরীর খাজা। রথযাত্রা এখানের প্রধান উৎসব। পুরীতে রথ টানতে প্রতি বছর লক্ষাধিক ভক্তের ভিড় হয়। এছাড়াও অন্যান্য উৎসবের পাশাপাশি সারা বছর ধরেই এখানে প্রচুর ভিড় হয়।
পুরীতে বিভিন্নভাবে যাওয়া যায়। প্লেনে এলে ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরে নামতে হবে। ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর থেকে পুরী প্রায় ৫৫ কিমি দূরে। ট্রেনে করে আসতে চাইলে সবথেকে ভালো হয় হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে রাতের ট্রেনে পুরী স্টেশন। তারপর ট্যাক্সি বা হোটেলের গাড়ি করে সরাসরি হোটেলে যাওয়া যায়। ২০২১ সালের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সরাসরি পুরী স্টেশন অবধি কয়েকটি ট্রেনের বিস্তারিত তুলে ধরা হল।
ট্রেন নাম্বার | ট্রেনের নাম | কোথা থেকে ছাড়বে | কখন ছাড়বে | পুরী কখন পৌঁছবে | কোন দিন চলে |
---|---|---|---|---|---|
০২৮৩৭ | হাওড়া পুরী ফেস্টিভাল স্পেশাল | হাওড়া | রাত ১০টা ৩৫ মিনিট | সকাল ৭টা ১০ মিনিট | সবদিন |
০২০৮৭ | ধৌলি এসএফ স্পেশাল | হাওড়া | সকাল ৯টা ১৫ মিনিট | সন্ধ্যে ৬টা | সবদিন |
০২২০১ | শিয়ালদহ পুরী দুরন্ত কোভিড - ১৯ স্পেশাল | শিয়ালদহ | রাত ৮টা | ভোর ৩টে ৫৫ মিনিট | সোম, শুক্র |
কলকাতা, দুর্গাপুর থেকে সরাসরি বাসেও পুরী আসা যায়।
পুরীতে থাকার জন্য বহু হোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস, হলিডে হোম রয়েছে। এখানে প্রতিরাতে হোটেলের ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০০ টাকা অবধি রয়েছে। বেশ কিছু হলিডে হোমে নিজেদের রান্না করার ব্যবস্থাও আছে। স্বর্গদ্বারের কাছাকাছিই আছে বাজার, যেখান থেকে সবজি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মাছ, সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ি এসব কিনে আনতে পারেন। তারপর নিজেরা বা রান্নার লোক দিয়ে রান্না করাতে পারেন। স্বর্গদ্বারের কাছের হোটেলগুলোতে থাকলে সুবিধা। বাজার, খাবার হোটেল, কেনাকাটার দোকান সব এই অঞ্চলেই। লাইটহাউস রোডের ধারের হোটেলগুলো থেকে দোকানপাট বেশ দূরে। তবে একটু নির্জনে থাকতে চাইলে এখানের হোটেলগুলো ভালো হবে। ওদিকের সৈকতে লোকজন তুলনায় কম হয়।
পুরীতে টোটো বা অটো বা গাড়ি ভাড়া করে এই সমস্ত জায়গাগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। ঘোরবার সময় কি কি জায়গা ঘুরবেন সেগুলো বলেই গাড়িতে উঠুন।

পুরীর সমুদ্র – বাঙালির কাছে পুরীর সমুদ্রের কোন তুলনা হয় না। এখানে ভোরবেলার সূর্যোদয় অসাধারণ লাগে। ভোরের সেই সূর্যকে হাতে ধরে ছবি তোলার জন্য প্রচুর ফটোগ্রাফার সৈকতে পাবেন। এই ছবিটি বাঙালির অ্যালবামে পুরীর স্মৃতি হিসাবে খুব পরিচিত একটা ছবি। সৈকতে বসার চেয়ার ভাড়া করা যায়। বয়স্কদের জন্য় এটা খুব সুবিধার। এখানে বসে সমুদ্রকে উপভোগ করতে পারেন। তবে ভাড়া করার সময় বসার সময় নিজে দেখে নেবেন এই সেই অনুযায়ী কতক্ষণ বসলেন তার পয়সা দেবেন। এছাড়াও উট, ঘোড়া বা খচ্চরের পিঠে সওয়ারি করতে পারেন। সমুদ্রে প্রায় সকলেই স্নান করে থাকে। তবে খুব বেশি দূরে যাবেন না, এখানে জলের স্রোত ভালোই থাকে। রাত দশটার পর সৈকতে যাবার দরকার নেই।
জগন্নাথ মন্দির – জগন্নাথ মন্দিরকে পুরীর প্রধান আকর্ষণ বলা যায়। হিন্দুদের চারধামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্র এই মন্দির। জগন্নাথ মন্দির ভ্রমণের বিস্তারিত তথ্য পাবেন এখানে।
বিমলা মন্দির – পুরীর জগন্নাথ মন্দির চত্বরে অবস্থিত বিমলা মন্দিরটি একান্ন সতীপীঠের অন্যতম এবং চার আদি শক্তিপীঠের একটি। বিমলা মন্দির নিয়ে বিস্তারিত তথ্য পাবেন এখানে।

স্বর্গদ্বার – স্বর্গদ্বার জায়গাটি আসলে একটি শ্মশান এবং তাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে পুরো অঞ্চলটা, যাকে আমরা স্বর্গদ্বার বলে চিনি। হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী এই শ্মশানে শবদেহ দাহ করা হলে তারা সরাসরি স্বর্গে যেতে পারে। প্রচলিত জনশ্রুতি অনুসারে স্বর্গদ্বার সৈকতেই ব্রহ্মদারু অর্থাৎ যা থেকে জগন্নাথ মন্দিরের তিনটি মূর্তি বানানো হয়েছিল, তা ভেসে এসেছিল। তাই বলা হয় যে স্বর্গদ্বার সৈকতে স্নান করা অত্যন্ত পূণ্যের কাজ। শ্রী চৈতন্যদেবও নাকি এখানে স্নান করেছিলেন। তবে পূণ্য অর্জনের জন্য না হলেও এখানে স্নান করতেই পারেন। এই অঞ্চলে ছোট বড় প্রচুর হোটেল আছে এবং পুরীর এই অঞ্চলেই হোটেলের সংখ্যা সর্বাধিক। শুধু হোটেলই নয়, কেনাকাটার অসংখ্য দোকানপাটও রয়েছে এখানে। এখানের সমুদ্রের শোভাও অসাধারণ।
রাধাকান্ত মঠ – জগন্নাথ মন্দির থেকে পায়ে হাঁটা পথে মাত্র এক কিমি দূরে অবস্থিত রাধাকান্ত মঠে শ্রীচৈতন্যদেব জীবনের শেষ আঠারো বছর, মতান্তরে আঠাশ বছর কাটিয়েছেন। তৎকালীন উড়িষ্যার রাজা ছিলেন প্রতাপরুদ্র দেবের কুলগুরু কাশী মিশ্রের বাড়ি ছিল এটি এবং সেই সময় বাড়িটির নাম ছিল গম্ভীরা। সেই বাড়িটি এখন শ্রীচৈতন্যর আবাস বা রাধাকান্ত মঠ হিসাবেই পরিচিত। এখান থেকেই শেষবার বেরিয়ে তিনি আর ফিরে আসেননি। তাঁর ব্যবহারের জিনিস রাখা আছে এখানে।

জগন্নাথের মাসির বাড়ি – জগন্নাথ মন্দির থেকে মাত্র তিন কিমি দূরে অবস্থিত গুন্ডিচা মন্দিরকে জগন্নাথের মাসির বাড়ি বলা হয়। রথযাত্রার সময় এখানেই জগন্নাথের রথ এসে থামে। এখানে জগন্নাথেরা তিন ভাইবোন সাতদিন থাকেন এবং এই সাতদিন এই মন্দিরেই জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার আরাধনা করা হয়। তারপর উল্টোরথে তিন ভাইবোন জগন্নাথ মন্দিরে ফিরে আসেন। এই মন্দির নিয়ে বিস্তারিত পড়ুন এখানে। মন্দিরে প্রবেশ করতে হলে টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। এখানে প্রতিটা বিগ্রহের সামনে পাণ্ডাদের উৎপাত দেখা যায়, তবে সচেতন থাকলেই তাদেরকে এড়িয়ে চলা সম্ভব।

লাইট হাউস – পুরীর স্বর্গদ্বার থেকে মাত্র দেড় কিমি দূরে পুরীর মোহনা যাওয়ার পথে নিউ ম্যারিন ড্রাইভ রোডের ওপর লাইট হাউসটি অবশ্যই ঘুরে আসুন। টিকিট কেটে বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে সাড়ে ৫টা অবধি এখানে ওঠার অনুমতি পাওয়া যায়। এখান থেকে সমুদ্র আর পুরীর যে দৃশ্য দেখা যায়, তা খুব সুন্দর। বিশেষ করে বিকালবেলার সূর্যের আলোয় এখান থেকে সমুদ্রের শোভা অসাধারণ দেখায়। খেয়াল রাখবেন লাইট হাউসে জুতো খুলে ওপরে উঠতে হয়।
তোতাপুরী আশ্রম – জগন্নাথ মন্দির থেকে মাত্র তিন কিমি দূরে অবস্থিত অদ্বৈত ব্রহ্মাশ্রমকে বলা হয় তোতাপুরী আশ্রম। এটি শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের গুরু শ্রী তোতাপুরী মহারাজের মহাসমাধিস্থল। ইনি নাঙ্গাবাবা, ন্যাংটাবাবা, নাগাবাবা, লাঙ্গুলি বাবা, দিগম্বর বাবা, কাঙ্কারিয়া বাবা ইত্যাদি নামেও পরিচিত। গভীর নির্জন বনভূমির মধ্যে এই আশ্রমে তিনি তাঁর জীবনের শেষ ৪০ বছর ছিলেন।

পুরীর মোহনা – লাইট হাউস থেকে প্রায় তিন কিমি দূরে পুরীর মোহনা। এখানে ধাউড়িয়া নদী বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। চারিদিকে ঝিনুকের সারি। সারা সৈকত জুড়ে এখানে আলাদা এক নৈঃশব্দ। স্বর্গদ্বারের কোলাহলের থেকে সাড়ে চার কিমি দুরত্বে এ যেন অন্য পুরী। অটো বা টোটো ভাড়া করে চলে আসুন এখানে। মোহনা খুবই নির্জন, তাই বিকালের পর না যাওয়াই ভালো। এবং যখনই এখানে যাবেন অনেকজন মিলে যাবেন।
এছাড়াও অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো হল জগন্নাথের পিসির বাড়ি, লোকনাথ মন্দির, সোনার গৌরাঙ্গ মন্দির, গোসাই বাবার সমাধি মন্দির বা জটিয়া বাবার সমাধি মন্দির, গুপ্তবৃন্দাবন বা গৌড়বিহার আশ্রম, কুলদানন্দ ব্রহ্মচারী আশ্রম, সুদর্শন পট্টনায়ক স্যান্ড আর্ট ইনস্টিটিউট, সুদর্শন ক্রাফট মিউজিয়াম ইত্যাদি। সমস্ত মন্দিরের ভিতরে জুতো পরে প্রবেশ নিষেধ, ভিতরে ছবি তোলা নিষেধ। কিছু মন্দিরে মোবাইল ও চামড়ার জিনিস নিয়ে যাওয়াও নিষেধ। কোন মন্দিরে বা স্থানে কি কি নিষেধ সেগুলো আগে থেকে জেনে নেবেন। বিভিন্ন মন্দিরে এখানে পাণ্ডাদের উৎপাত। তবে ওদের সাথে তর্ক করবেন না। ওদের এড়িয়ে চলবার চেষ্টা করুন।
পুরী থেকে কাছাকাছি ঘোরার জায়গাগুলো হল কোনারকের মন্দির, রঘুরাজপুর গ্রাম, লিঙ্গরাজ মন্দির, চিল্কা হ্রদ, বালেশ্বর সৈকত, চন্দ্রভাগা সৈকত ইত্যাদি জায়গা।
সারা বছর ধরেই এখানে ঘুরতে আসা যায়। তবে অক্টোবর থেকে মার্চ অবধি পরিবেশ বেশ মনোরম থাকে। বর্ষাকালে সমুদ্রে না আসাই ভালো। রথযাত্রার সময় পুরীতে রথ টানতে প্রতি বছর লক্ষাধিক ভক্তের ভিড় হয়। সেই সময় যেতে চাইলে অনেক আগে থেকে সব বুকিং করে রাখতে হবে।
জগন্নাথ মন্দিরে এসে মহাপ্রসাদ না খেলে মন্দির আসাই অসম্পূর্ণ হয় বলে মনে করে ভক্তেরা। আর পুরীতে এসে যেটা না খেলেই নয় তা হল পুরীর খাজা। শুধু খাওয়াই না, আত্মীয় বন্ধুবান্ধবদের জন্য খাজা কিনে না নিয়ে গেলে তারা আপনার পুরী যাওয়াকেই অস্বীকার করবে। এখানে সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছের ভালো ভালো পদ রান্না করা হয়। আগে থেকে হোটেলে বলে রাখতে পারেন। স্বর্গদ্বার সংলগ্ন রেস্টুরেন্ট গুলোতেও মাছ, কাঁকড়া ইত্যাদি বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের দোকান পাবেন।

জগন্নাথ মন্দির চত্বরে আনন্দবাজার থেকে জগন্নাথের মহাপ্রসাদ কিনতে পাওয়া যায়। বাকি পুরীতে কেনাকাটির জন্য অবশ্যই স্বর্গদ্বার অঞ্চল। সৈকতের ওপরেও অনেক অস্থায়ী দোকান আছে, সেখান থেকেও জিনিস কিনতে পারেন। পেন থেকে শুরু করে শাড়ি সব কিছুই এখানে পাবেন। জগন্নাথ বা মন্দিরের ছবি, কাঠের পেন, খেলনা, ঘর সাজানোর হরেকরকম জিনিস, আসবাবপত্র, ঝিনুকের মালা, হাতের কাজের বিভিন্ন জিনিস পাবেন। বিভিন্ন ধরনের পাথর, মুক্ত বা গয়নাও কিনতে পারেন। বিশেষ করে তারকশি বা ফিলিগ্রি কাজের গয়না কিনতে পারেন। ফিলিগ্রি বলতে সোনা বা রূপোর সূক্ষ্ম কাজ যা দেখতে জালের মত, তাকে বোঝায়। এই শিল্প ৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো। ওড়িয়া ভাষায় ফিলিগ্রির এই কাজকে বলে তারকশি। সুদর্শন ক্রাফট মিউজিয়াম থেকে অনেকে কাঠ, কাঁচ, ধাতু বা পাথরের খোদাই করা শিল্পের জিনিস যদি কিনে থাকে।
ট্রিপ টিপস
- কিভাবে যাবেন – প্লেনে এলে ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরে নামতে হবে। ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর থেকে পুরী প্রায় ৫৫ কিমি দূরে। ট্রেনে করে আসতে চাইলে সবথেকে ভালো হয় হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে রাতের ট্রেনে পুরী স্টেশন। তারপর ট্যাক্সি বা হোটেলের গাড়ি করে সরাসরি হোটেলে যাওয়া যায়। এছাড়া কলকাতা, দুর্গাপুর থেকে সরাসরি বাসেও পুরী আসা যায়।
- কোথায় থাকবেন – পুরীতে থাকার জন্য বহু হোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস রয়েছে। এখানে প্রতিরাতে হোটেলের ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০০ টাকা অবধি রয়েছে। বেশ কিছু গেস্ট হাউসগুলোতে নিজেদের রান্না করার ব্যবস্থাও আছে। স্বর্গদ্বারের কাছাকাছি হোটেলগুলোতে থাকলে সুবিধা। বাজার, খাবার হোটেল, কেনাকাটার দোকান সব এই অঞ্চলেই।
- কি দেখবেন – পুরীর সমুদ্র, জগন্নাথ মন্দির, বিমলা মন্দির, স্বর্গদ্বার, জগন্নাথের মাসির বাড়ি, জগন্নাথের পিসির বাড়ি, লাইট হাউস, পুরীর মোহনা, গম্ভীরা, সুদর্শন পট্টনায়ক স্যান্ড আর্ট ইনস্টিটিউট, সুদর্শন ক্রাফট মিউজিয়াম।
- কখন যাবেন – সারা বছর ধরেই এখানে আসা যায়।
- সতর্কতা –
- জগন্নাথ মন্দিরে অহিন্দুদের প্রবেশ নিষেধ।
- সমস্ত মন্দিরের ভিতরে জুতো পরে প্রবেশ নিষেধ, ভিতরে ছবি তোলা নিষেধ। কিছু মন্দিরে মোবাইল ও চামড়ার জিনিস নিয়ে যাওয়াও নিষেধ। কোন মন্দিরে কি কি নিষেধ সেগুলো আগে থেকে জেনে নেবেন।
- বিভিন্ন মন্দির বা দর্শনীয় স্থান দিনের কোন সময় খোলা থাকে তা আগে থেকে জেনে নেবেন।
- রাত দশটার পর সৈকতে যাবার দরকার নেই।
- মোহনা খুবই নির্জন, তাই বিকালের পর না যাওয়াই ভালো। এবং যখনই এখানে যাবেন অনেকজন মিলে যাবেন।
- লাইট হাউসে টিকিট কেটে বিকেলবেলা ওঠার অনুমতি পাওয়া যায়। ক্যামেরার জন্য আলাদা টিকিট, তবে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে কোনো টিকিট লাগে না। এখানে জুতো খুলে ওপরে উঠতে হয়।
- বিশেষ পরামর্শ –
- সৈকতে বসার চেয়ার ভাড়া করা যায়। বয়স্কদের জন্য় এটা খুব সুবিধার। এখানে বসে সমুদ্রকে উপভোগ করতে পারেন। তবে ভাড়া করার সময় বসার সময় নিজে দেখে নেবেন।
- বিভিন্ন মন্দিরে এখানে পাণ্ডাদের উৎপাত। তবে ওদের সাথে তর্ক করবেন না। ওদের এড়িয়ে চলবার চেষ্টা করুন।
তথ্যসূত্র
- নিজস্ব প্রতিনিধি
- https://en.wikipedia.org/Puri
- https://indianculture.gov.in/
- https://eisamay.indiatimes.com/
- https://indiarailinfo.com/
2 comments